৬১ সংস্থার উদ্বৃত্ত টাকা সরকারি কোষাগারে দিতে হবে

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে | 2023-08-29 18:07:24

স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দান আইন-২০২০ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। এতে ৬১টি সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি উত্থাপন করেন। যদিও বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম। পরে অবশ্য তার বিরোধিতার প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। এরপর বিলটি উত্থাপনের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে সর্বাধিক সম্মতি পাওয়ায় তা উত্থাপন করা হয়। বিলটি অধিকতর যাচাই-বাচাই করার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিলটি যাচাই-বাছাই করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

আইনে উদ্বৃত্ত অর্থ বলতে বোঝানো হয়েছে, তফসিলভু্ক্ত কোনো সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় এবং বাৎসরিক পরিচালন ব্যয়ের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ।

আইনের ৫ ধারার (খ) উপধারায় বলা হয়েছে, প্রতি বছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ওই অর্থ বছরের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

তফসিলভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- সব শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরামাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), রাজশাহী, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া রয়েছে- বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন, বিআরটিএ, বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন।

আইনের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত/আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ অন্যান্য স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর শেষে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব থেকে দেখা যায়, বর্ণিত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা পড়ে আছে। সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের এবং সেই কারণে এসব অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করা উচিত। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক ভিক্তিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এ পরিকল্পনা ও গৃহিতব্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সময়াবদ্ধভাবে বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে উন্নয়নশীল দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জন। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য বিপুল অর্থের সংস্থান প্রয়োজন, যা বর্তমান সংগৃহিত রাজস্ব দ্বারা মেটানো দূরূহ। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় ও সরকারি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে উল্লিখিত সংস্থাগুলোর তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ আইনের বিলটি আনা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর