জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: চলমান ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা নিয়ে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য সংসদেও। নির্বাচন পরিচালনায় সংসদ সদস্যদের সমন্বয়কারী থাকা এবং প্রচারণায় অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও সরকারি দলের সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ানরা বললেন এটা তাদের রাজনৈতিক অভ্যাস। পৃথিবীর কোনো দেশে আছে নির্বাচনের পর বিরোধী দল বলছে ভোট অবাধ নিরপেক্ষ হয়েছে, আমরাও বলিনি, স্বীকার করছি। দুই পক্ষের পাল্টা-পাল্টি বক্তব্যের পর বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা দিনের কার্যসূচি থেকে বর্জন (ওয়াক আউট) করেন।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে বিষয়টি নিয়ে উত্তাপ ছড়ান বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ। তিনি সিটি নির্বাচনে অবাধ নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টির দাবি করেন।
জবাব দিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ওনার (হারুনের) কথাই চট্টগ্রামে ২২ শতাংশ ভোট কাস্টিং যদিও ২৪ শতাংশ। নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়েছে, কারণ যদি সেখানে আওয়ামী লীগ প্রভাব খাটাতো তাহলে ৫০ শতাংশের বেশি ভোটে আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হতো। তা তো করেনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন ৯০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল। হারুন প্রশ্ন রেখেছেন ওনার কাছে কি জনমত মাপার যন্ত্র আছে? এর জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, মাপার যন্ত্র আছে হারুনুর রশীদের দলের চেয়ারপারসনের কাছে । কারণ তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে বলেছিলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০টার বেশি আসন পাবে না। তাহলে ওনার কাছে মাপার যন্ত্র আছে। এই সেই আওয়ামী লীগ যার অধীনে ৫টি সিটিতে বিএনপি বিজয়ী হয়েছিল।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত গাজীপুরে বিএনপি বিজয়ী না হয়েছে, ততক্ষণ অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না বলে দাবি করেছিল, এই স্লোগান বিএনপি’র মুখে মুখে ছিল। কিন্তু দেখা গেল আমরা ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছি। আমরা ক্ষমতাসীন দল। গাজীপুর নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া বলেছিলেন যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হত আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হত। আপনার নেত্রীর কাছে ভোট গণনার মেশিন আছে। যার জন্য তিনি বলতে পেরেছেন আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, এই নির্বাচন শুরুর আগ থেকে বিএনপি বলছে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওনি বললেন ঢাকার সব জায়গায় গোলমাল হচ্ছে, কোথায়?
এমপিদের প্রচারণা নিয়ে তোফায়েল বলেন, আমি নিজে ইসিতে গিয়েছিলাম, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে। তারা স্বীকার করেছে এটা আইন না। আইন হলে সংসদে পাস করতে হয়। এটা হল একটা বিধি। সেই বিধিতে লেখা আছে সুবিধাভোগী এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু সংজ্ঞায় এমপির নাম আছে এটা ঠিক। আপনি বলেন, আপনি (হারুন) আমি কি সুবিধাভোগী?
সুবিধাভোগীর সংজ্ঞা কী? আমি মন্ত্রী ছিলাম, এমপি ছিলাম, এখনও আছি এটা আমার অপরাধ। আর মওদুদ আহমদ উত্তরের সমন্বয়ক। তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন, তিনি এমপি নন, বিএনপির আমলে মন্ত্রী ছিলেন, এরশাদের আমলে উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। মওদুদ সাহেব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি না, গুরুত্বপূর্ণ হলাম আমরা। আমরা বলেছি আপনাদের কাছে পরিবর্তন করতে আসি নাই। আমরা ক্ষমতাসীন দল আমরা যদি পরিবর্তন করি তাহলে আমাদের ওপর বিরূপ ধারণা হবে, পরে বলবে আমরা নির্বাচনে জেতার জন্য পরিবর্তন করেছি। ওনারা চেষ্টা করেছিলেন এটাকে সংশোধন করতে, পারেন নাই। আমরাও মেনে নিয়েছি।
আমরা বলেছি মুজিব বর্ষ শুরু হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সভা করব, ভোট চাইব না। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোন দেশ আছে নির্বাচনের পরে বলে নাই যে নির্বাচন অবাধ এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। এটা আমরাও বলেছি। অস্বীকার করব না। আমরাও বলেছি। এটা সঠিক নয়। আমরা বলেছি অবাধ নিরপক্ষে গ্রহণযোগ্য সত্য নির্বাচন হবে।
আমির হোসেন আমু বলেন, সব সময় বিএনপির রাজনীতি নেগেটিভ। ১৯৮৬ সালে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নাই। তারা ক্ষমতা গ্রহণের অন্য পথ অবলম্বন করার চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীকালে তারা নির্বাচন বিমুখতা প্রমাণ করেছে। ৫টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরেও যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না তাদের চিন্তা চেতনা কোথায় ছিল। তারা নির্বাচন বিমুখতা সব সময় থাকে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে রাজনীতি বিরোধী। মানুষের কাছে তাদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। যতই তারা মানুষ দ্বারা পরিত্যক্ত হয় ততই ওনারা কারচুপির কথা বলেন।
বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, নির্বাচন কি আসলে হবে, নাকি প্রহসন চলবে? সারাদেশে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার বার বার বলছেন যে আপানার নির্বাচনে আসেন শেষ পর্যন্ত থাকেন। আমরা শেষ পর্যন্ত থাকব আমাদের মিছিল থেকে লোক ধরে নিয়ে বলবেন ছিনতাইকারী, পকেটমার। মিছিল থেকে ধরে নিয়ে গায়েবি মামলা দেবেন। এটা কত দিন চলবে।
তিনি বলেন, দেশে কি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারবো না। আমরা কি দেশে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবো না। এটি সৎ ইচ্ছার ব্যাপার। তার প্রমাণ আমার এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়েছে একেবারে শান্তিপূর্ণ, সেখানে কোন ধরনের সহিংসতা হয়নি। মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছে। এটা সৎ ইচ্ছার ব্যাপার। চট্টগ্রামে ২২ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়। কাজেই সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বির্তক তৈরি হয়েছে মন্ত্রী, এমপিদের অংশগ্রহণে কোনো ঘরোয়া সভার করার সুযোগ নাই। আপনার আইন পাস করেছেন আইন করে আবার আপনারাই দাবি জানাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে। পুলিশের ঘাড়ে কয়টা মাথা আছে সিনিয়র এমপি-মন্ত্রীরা যদি পুলিশকে বলে এটা কর তার বাইরে পুলিশ কোনো কাজ করতে পারে?
তিনি বলেন, জনপ্রিয়তা যাচাই করতে হলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করুন। পরে তারা সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেন।