জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: রাজাকারের তালিকায় মেম্বার চেয়ারম্যানরা যাচাই-বাছাই না করে নাম দেওয়ায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
রাজাকারের তালিকা নিয়ে সংসদ অধিবেশনে মোজাম্মেল হক বলেছেন, ভুলভ্রান্তি ছিল বলেই দু:খ প্রকাশ করে প্রত্যাহার করেছি। রাজাকারের তালিকায় যাদের নাম দিয়েছে তারা সক্রিয় ছিল কি না তা শুধু যাচাই করার ব্যাপার। সমস্ত ডকুমেন্টারি প্রমাণাদি আছে আমরা চেক করব। সমস্যাটা হচ্ছে, তখনকার মেম্বার চেয়ারম্যান সাহেবদের কাছে নাম চাওয়া হয়েছিল- তারা সমানে অর্থাৎ যাচাই-বাছাই না করে অনেকের নাম দিয়ে দিয়েছে হয়তো। সেজন্যই এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে একাদশ সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সংসদ সদস্যের প্রশ্নবানে তোপের মুখে পড়েন মন্ত্রী। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে করেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রশ্ন রেখে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, এই কথাটি সরাসরি বলা যায় না। যার কাছ থেকেই তথ্য নেন, সেই তথ্য সঠিক আছে কিনা এটা দেখার দায়িত্ব এই মন্ত্রণালয়ের ওপর বর্তায়। কিছু কিছু জায়গায় অসংগতির কারণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আমরা অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। প্রকৃত রাজাকাররা এই লিস্টে আসেনি।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি আগেই দু:খ প্রকাশ করে সেই তালিকা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ভুলত্রুটি ছিল বলেই। ভবিষ্যতে যাতে আর ভুলত্রুটির পুনরাবৃত্তি না হয় সেই জন্য আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে এবং সম্পূর্ণরূপে যাচাই বাছাই করেই ভবিষ্যতে তালিকা প্রকাশ করব।
সরকারি দলের আরেক সদস্য মেজর অব রফিকুল ইসলামও মন্ত্রীর জবাবে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, রাজাকারের তালিকা করার প্রশ্নেই ভুল আছে, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা কোনও তালিকা তৈরি করব না। আমাদের লক্ষ্য ছিল যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে তাদের যে তালিকা বিদ্যমান আছে সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে। সংসদীয় কমিটিতেও সেই সিদ্ধান্ত ছিল। মন্ত্রী বলেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করেনি, করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এই কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করছি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি দিয়েছে সেটা আমরা জানি না, যেহেতু মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাই তারাই তো প্রকাশ করতে পারত, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী কেন সেটা প্রকাশ করলেন? উনি সঠিক তালিকা প্রকাশ করতে পারেননি, উনি পারবেনও না।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, সংসদে আমি এই কথাই বলেছিলাম। আমরা কোন তালিকা তৈরি করব না, প্রকাশ করব। ঘটনাটাও তাই হয়েছে। আমরা যেটা পেয়েছি সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও প্রণয়ন করেনি, তাদের কাছে যা সংরক্ষিত ছিল তাই দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে সমস্ত ডকুমেন্ট সংরক্ষিত ছিল এবং সেখান থেকেই যে তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে তাই আমরা প্রকাশ করেছি। তবে ভবিষ্যতে যাচাই বাছাই করেই তালিকা প্রকাশ করব।
ফরিদুল হক খানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, রাজাকারের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রণয়ন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ হতে ১০ হাজার ৭৮৫ জন রাজাকার, আল বদর, আল শামস এবং স্বধীনতা বিরোধীদের একটি তালিকা এ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। প্রাপ্ত তালিকা হুবহু মুক্তিযুদ্ধ বিষয় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় উক্ত তালিকা প্রস্তুত করেনি সেহেতু প্রশ্নে উত্থাপিত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।