একদিনের বেশি ফাইল আটকে রাখলে বিভাগীয় ব্যবস্থা

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 04:07:51

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব গ্রহণের পর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছি। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমার প্রথম কর্মসূচি ছিল জবাবদিহিতা, দুর্নীতিকে নির্মূল করা, অনিয়মকে যেকোনো মূল্যে বন্ধ করা। সে লক্ষ্য নিয়েই অনিয়ম বন্ধের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি লাঘবে কোনো কর্মকর্তার কাছে এক দিনের বেশি ফাইল আটকে থাকলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছি। যার ফলে কাজে গতি এসেছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) রাতে একাদশ সংসদের ৬ষ্ঠ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। এসময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে করছিলেন।

পূর্তমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত প্রায় ৯২ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছি।  যে সকল ঠিকাদার বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করত তাদের অনেককে আমরা ব্ল্যাক লিস্টেড করেছি। অনেক ঠিকাদারের কাছ থেকে অতিরিক্ত নেওয়া বিল আমরা আদায় করেছি। প্রায় ১০০ একর সম্পত্তি বেহাত হয়েছিল। সেই সম্পত্তি উদ্ধার করেছি। এর ভেতর অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে সরকারি সম্পত্তি বেহাতের হাত থেকে সেই সম্পত্তি আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় শুধু নিজ মন্ত্রণালয় নয় ৪৬ মন্ত্রণালয় এবং দফতর সংস্থার কাজ করে থাকে। ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২০ তলা ভবন মাত্র ১৩ মাসের ভেতরে উন্নত মানসম্মত ভাবে নির্মাণ করার মধ্য দিয়ে গণপূর্ত বিভাগ প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের গণপূর্ত বিভাগ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারে।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে সেবার জন্য মানুষ আসত। সেখানে একটা অভিযোগ ছিল হয়রানির। একটি নকশা অনুমোদনের জন্য ১৬টি স্তরে যেত হত। আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখলাম এটার কোনো প্রয়োজন নাই। আমরা ১২টি স্তরকে বাদ দিয়ে মাত্র ৪টি স্তর রেখেছি। সেই স্তরে যাতে সেবাপ্রার্থীরা হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি। বাসায় বসে ইমারত নির্মাণের নকশা অনুমোদনের আবেদন করা যায়, মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে আসবে আপনার নকশা অনুমোদিত হয়েছে। ভূমির ছাড়পত্র আমমোক্তার নামা গ্রহণ করার অন্যান্য প্রক্রিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ভুগতে হত। এবং সময় ক্ষেপণ করতে হত। আমরা সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। এই সময়ের ভেতরে এবং ডিজিটাল পদ্ধতি করে দিয়েছি যে আবেদন করার পর দিন জানতে পারবেন কোন পর্যায়ে কি অবস্থায় আছে। যে কর্মকর্তার কাছে একদিনের বেশি ফাইল পড়ে থাকবে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়ার প্রেক্ষিতে এখন গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, দেশ আজ উন্নয়নশীল না উন্নত দেশ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু সেই জায়গায় যেতে পারেনি একটি কারণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রা পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘটনার মাস্টার মাইন ছিলেন, যিনি রাষ্ট্রের কর্মচারী ছিলেন।

১৯৬৯ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালিন বাঙালি জাতির নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার তথ্য পান। এবং তিনি ডেপুটি চিফ অব মিশন সিডনি সোবারকে এই তথ্য জানান। এবং সেটা মার্কিন কনসুলেট থেকে ২৯ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দফতরকে জানানো হয়। ১৯৭২ সালে সরকারের অগোচরে কর্নেল ফারুক মার্কিন দূতাবাসে যান যেটা তাদের ডি ক্লাসিফাইড ডকুমেন্টে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। একই বছর ২১ জুলাই কর্নেল রশিদ সরকারের অগোচরে মার্কিন হাই কমিশনে গিয়ে অস্ত্র কেনার কথা বলেন এবং সেখানে বলেন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে একটা বড় টিম করা হয়েছে, সেই টিম আমাদেরকে পাঠিয়েছে, অস্ত্র দিতে হবে। এরপর পরবর্তী ১৯৭৪ সালের ১৩ মে কর্নেল ফারুকরা মার্কিন হাই কমিশনে গিয়ে সাহায্য চান যে শেখ মুজিব সরকারকে উচ্ছেদ করব আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করেন। এই ধারাবাহিক ঘটনা প্রবাহ যারা সংগঠিত করেছিল তারা একাধিকবার জিয়াউর রহমানের নাম রেফার করেছিল।

তিনি বলেন, সেখানে লেখা আছে আমার জীবন বিপন্ন করে হলেও সংবিধান এবং রাষ্ট্রপতিকে রক্ষা করব এই শপথ গ্রহণ করা জিয়াউর রহমান শপথ ভঙ্গ করে ২০ মার্চ কর্নেল ফারুক এবং রশিদকে বলেছিলেন গো অ্যাহেড। সেখানেই তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করেন তারপর ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, আজ দেশে অন্য বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা যে সম্প্রসারণ হয়েছে তা বিস্ময়কর। এক সময় বাংলাদেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং দারিদ্রের মডেল হিসেবে বলা হত। সেই দেশ আজ সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত। একসময় বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় থাকা সরকার প্রধানকে বলা হত আকণ্ঠক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। আজ সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব পরিমন্ডলে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৎ পরিশ্রমী সাহসী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর