ওয়াজ মাহফিলে বাধা প্রদান নিয়ে সংসদে ভুল তথ্য দেওয়ায় সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের ভুল ব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি, জামাতি রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এভাবে তোপের মুখে পড়েন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করছিলেন। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্যের কড়া জবাব দেন সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বর্তমান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
হারুনুর রশীদ বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধিত সংবিধানের পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসী হবে এবং যাবতীয় কাজের ভিত্তি এটিই হবে। তবে নতুন সংশোধিত সংবিধান থেকে এটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হিসেবে রাখা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় পূর্বের বিষয়টি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সেটির পরিবর্তে সংযোজিত হয়েছে দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে/ পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। বিষয়টিতে আপত্তি করেছিলাম।
তিনি বলেন, বিসমিল্লাহর রহমানের রাহিমের প্রকৃত অর্থ সংযোজিত হওয়া উচিত। এসময় তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় একটা বিষয় নিয়ে বির্তক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তাফসিল মাহফিলে যে আলোচনা হচ্ছে, কোরআন হাদিসের আলোকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তাফসিরগণ আলোচনা করছেন। সেই সমস্ত আলোচনা নিয়ে আপত্তি ও অসংলগ্নজনক কথা বার্তা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আমার যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাফসির মাহফিল করতে গেলে নিষেধাজ্ঞা আসছে, আপত্তি আসছে। যে সমস্ত বিষয়ে আপত্তি আসছে, সেটা আমাদের মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে। এসময় সরকারি দলের সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন। হারুন বলেন, যত আপত্তি করবেন আপনাদের বিপক্ষে যাবে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম।
তার বক্তব্যের জবাব দিয়ে সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দিয়ে থাকি। দেশের সমস্ত জায়গায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, সেখানে আল্লাহ রাসুলের কথা বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র জামাতি পন্থায় মানুষ যাতে শিক্ষা-দীক্ষা না নেয় এবং দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত না করে সেই দিকটাকে আমরা অনেক সময় বলে থাকি এটা যেন না হয়। কিন্তু ইসলামের কার্যকলাপে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না।
ফিরোজ বলেন, ওনি (হারুন) জামাতপন্থিদের কথা মতো এখানে কিছু কথা উত্থাপন করেছেন। দেশের ১৬ কোটি মানুষ এটার বিরোধিতা করে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ এর পক্ষে। সারা বিশ্বে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চাই না।
আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ওনি (হারুন) সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে পূর্বের ন্যায় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করলেন। তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের ব্যাখা হিসেবে অপব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ওই যে তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি, যে ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না বৌ তালাক হয়ে যাবে। কোরআন হাদিসের কোন ব্যাখায় কবে এই শব্দ বা বাক্য নাজিল হয়ছে এই ব্যাখা দিতে পারবেন না হারুন।
তিনি আরও বলেন, আসলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ওনি হঠাৎ করে এমন একটি পয়েন্ট উত্থাপন করলেন। যার সঙ্গে সংসদের কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, আমরা ওরশে বোমা হামলা করতে দেয়নি। আমরা হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেই নি। আমরা ইসলামকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য এবং গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলছেন। যারা প্রকৃত তাফসির-মাহফিল করছেন, ওরস করছেন কিংবা বিভিন্ন জলসা করছেন তাদের রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করছে।