জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সংসদে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী’ খেতাব পাওয়ার কথা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেভেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইনানশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ রাষ্ট্রের কোষাগারে নিতে আইন করার প্রস্তাব বিরোধী দলের তীব্র বিরোধিতার মধ্যে পাস হয়।
ব্যাংক খাত ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকতে থাকার মধ্যে আইনটি পাস হলে তা ‘কালো আইন’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। পুঁজিবাজারে ধস, অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ কেন নেওয়া হচ্ছে প্রশ্ন তুলে লে অর্থমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন তারা।
জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে যা হয় তাই হয়েছে। বাজেট করার সময় চিন্তা করে নাই? রাজস্ব ঘাটতি সম্পর্কে চিন্তা করে নাই? ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। আগের বছরের চেয়ে ৪৫ ভাগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। করেছে মাত্র ৭ শতাংশ। এনবিআরের ব্যর্থতার কারণে এই বিল সমর্থন করতে পারছি না। প্রত্যাহার করার দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, “উনি (অর্থমন্ত্রী) চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট। কিন্তু ওনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কারণ নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সাকসেসফুল বিজনেসম্যান, অর্থনীতিতে ভালো করবেন। কত দূর ভালো করেছেন উনি চিন্তা করবেন। ব্যাংকের মালিক ডিরেক্টররা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। এটা কি দেশ? টাকা পাচার হয়, উনি ব্যবস্থা নেন না। বিভিন্ন সংস্থার টাকা খরচ করছেন। আাগমী বছর ট্যাক্স না পেলে কী করবেন?”
জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, “একবার চিন্তা করে দেখেন। সাইফুর রহমান চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট ছিলেন। আমিও তাই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেভেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। সবার বিষয়েই আমি জানি।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “দেশে যত বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটবে সেটার প্রতিফলন হবে পুঁজিবাজারে। অর্থনীতির মূলভিত্তি পুঁজিবাজার। উন্নত দেশে তাই হয়। কিন্তু আমাদের দেশে অর্থনীতি একরকম, পুঁজিবাজার আরেকরকম। মনে হয় পুঁজিবাজার ভিন্ন দ্বীপের।”
উত্থাপিত বিলে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সদস্যদের বিরোধিতার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য পিছিয়ে পড়ে থাকা মানুষকে মূল স্রোতে নিয়ে আসা। যত বড় ব্যবসায়ী তত বেশি ট্যাক্স দিচ্ছে। আইন সেভাবেই সাজানো। এ ধরনের আইন নতুন নয়। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন দশম সংসদে পাস হয়েছে। সেখানে এ ধরনের কথা বলা হয়েছে। একাদশ সংসদে উদ্ভিদের জাত সংরক্ষণ আইনে একই ধরনের কথা বলা হয়েছে। সরকারি কোষাগারে যদি কোন অর্থ জমা না হয় অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা কেমন করে আসবে?”
মুস্তফা কামাল বলেন, “বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে তবে যেভাবে সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলা হচ্ছে সেটা মোটেও ঠিক নয়। টাকা পাচারের সংখ্যা আমরা জানি কিভাবে? তার মানে আমি কি পার্টনার? তাহলে তো হয় অভিযোগ করতে হবে না হলে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজার মোটামুটি স্থিতিশীল আছে। পুঁজিবাজার আরও ভালো করা উচিত। যে জায়গায় থাকা উচিত সেখানে নেই।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “অর্থনীতির শৃঙ্খলা একদিনে আসবে না। আজকের এই অবস্থার জন্য সবারই কম বেশি দায়বদ্ধতা আছে। যখন প্রাইভেট ব্যাংক ব্যবস্থা শুরু হয়েছে তখন থেকে এই অবক্ষয় শুরু। এগুলো শোধরানোর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
তিনি বলেন, “বলা হচ্ছে সমানে অর্থপাচার হচ্ছে। টাকার অংক দিয়ে বলে দেয় এই টাকা পাচার হচ্ছে। আমার কাছে কোন নম্বর নাই। আমার কাছে (ধারণা, অনুমান) তবে সাধারণভাবে বুঝি যদি আংশিকও পাচার হয় তবুও দেশ থেকে পাচার হচ্ছে।”
যারা সংখ্যা উল্লেখ করে অর্থপাচারের কথা বলছেন তাদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, “টাকার নম্বর উল্লেখ করা হচ্ছে, তাহলে আমি কি সাক্ষী? নাকি যিনি পাচার করছেন তার পার্টনার? তাহলে কিভাবে বলতে পারি, যদি বলতে পারতাম তাহলে কোর্টে গিয়ে মামলা করা উচিত।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, “পুঁজিবাজারে সে ধরনের উত্থান দেখিনি, সেভাবে পড়ে যাওয়াও দেখিনি। এটা মোটামুটি স্ট্যাবলিটির মধ্যে আছে। দেশের সমৃদ্ধির প্রথম শর্ত পুজিবাজার। দেশ যত বেশি উন্নতি করবে, যে দেশে যত বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটবে সেটার প্রতিফলন হবে পুঁজিবাজারে। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনীতি একরকম পুঁজিবাজার আরেকরকম। মনে হচ্ছে পুঁজিবাজার ভিন্ন দ্বীপের। আমার শুনতে ভালো লাগে না। পুঁজিবাজার আরও ভালো করা উচিত। যে জায়গায় আসা উচিত সেই জায়গায় নেই।”