জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: জাতীয় নির্বাচনে সংখানুপাতিকহারে ভোটের হিসাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের প্রস্তাব করে বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় অনিয়মের সুযোগ ও সম্ভাবনা কম। পৃথিবীর বহু দেশে সংখ্যানুপাতিকহারে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে যে দল শতকরা ২০ ভাগ ভোট পাবে, সেই দল সংসদের মোট আসনের ২০ ভাগ সংসদ সদস্য পাবে। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হবে না। নির্বাচনী ব্যবস্থা সুসংহত হবে।’
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এই প্রস্তাব করেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে থাকার কারণে সরকারি দলের সদস্যরা তাদের নিজেদের চিন্তা চেতনার ভোট দিতে পারেন না। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার বা সরকারের জবাবদিহিতার স্থান হওয়ার বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংসদ সদস্যদের সংসদে অবস্থান নিতে হয়। নাহলে তারা তাদের সংসদ সদস্য পদ হারাবেন। ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতিতে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছাড়া বাকি সংসদ সদস্যরা বেসরকারি সদস্য। আমাদের দেশে কার্যপ্রণালিবিধিতেও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। সরকারি মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়া বাকি সকল নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা যৌথভাবে সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে সংসদ গঠন করা হয়। সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সকল সদস্য এককভাবে বা যৌথভাবে এই দায়িত্ব পালন করলেই সংসদ ফলপ্রসূ হতে পারে। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ এখানে বাধা স্বরূপ কাজ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই অনুচ্ছেদটি পুরোপুরি বাতিল হোক এটা চাই না। তবে সংসদীয় ব্যবস্থার যে পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু আছে সেটা সংসদে সরকারি দলের সদস্যদের সরকারি কর্মকাণ্ডের কোনো বিষয়ে বিরোধিতা কিংবা সরকারের বাইরে ভোট প্রদানের কোনো সুযোগ নেই।’
জিএম কাদের বলেন, ‘সংসদীয় পদ্ধতির সরকারের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে জাতীয় সংসদ। কিন্তু এখানে সেক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সরকারে সরকারি দলের শুধু মন্ত্রীরা ছাড়া বাকি সব সদস্য, বিরোধী দলের সদস্য সবাই সরকারের যে কোনো বিষয়ে সমালোচনা এবং বিপক্ষে ভোট দিতে পারে। শুধু মন্ত্রীরা পারে না। বাজেট, অভিশংসন ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে বিরোধী দলের সদস্যদের পাশাপাশি সরকারি দলের সদস্যরাও যাতে বিপক্ষে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তাহলে সংসদ কার্যকর হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংসদে সমালোচনা হলে সংসদ প্রাণবন্ত হয়। বিরোধী দলের সদস্যরা কোন বিষয়ে কোনো সুপারিশ মেনে নেওয়া হলে তা সংসদকে কার্যকর করে। এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। এই বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে, কিন্তু বেকারের তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্মের উপযোগী করে ঢেলে সাজাতে হবে, তাতে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে। মাদকের মারাত্মক ছোবল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে।’
বিরোধী দলের উপনেতা বলেন, ‘যেভাবে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে তা সত্যিই আশঙ্কাজনক। গত বছর মাদক বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালনা হচ্ছে, কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় এ অভিযান সফল হচ্ছে না। দেশের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জনসংখ্যা। প্রতিনিয়তই জনসংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের সবচেয়ে জনসংখ্যার দেশ প্রথমে চীন, পরে ভারত। কিন্তু বাংলাদেশের জনঘনত্ব চীনের চেয়ে আটগুণ ও ভারতের চেয়ে সাড়ে তিনগুণ বেশি। জনসংখ্যার এ সমস্যার সমাধান করা জরুরি।’
বেকার সমস্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব। ২০১৯ সালে সার্ভে অনুযায়ী ২০১০ সালে বেকারের সংখ্যা ছিল সব চেয়ে কম ২০ লাখ, ২০১২ সালে ২৪ লাখ, ২০১৬ সালে ২৮ লাখ এবং তাদের পূর্বাভাস অনুসারে ২০১৯ সালে ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের কর্মসংস্থানগুলো হতে হবে দেশের বেকারদের কথা চিন্তা করে। তারা যাতে কাজ করতে পারেন সেই রকম কাজ করতে হবে।’