জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আবারও সংসদে এমপিদের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। কয়েকজন সংসদ সদস্য বলেছেন, আপনি (টিপু মুনশি) দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা কেজি দরে পৌঁছেছে। আপনি মানুষকে বাঁচান। জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, আমরা এই বিপদকে সম্পদে পরিণত করব। আপনার একটু অপেক্ষা করেন আগামী তিন বছর পর আমরা পেঁয়াজ রফতানি করব।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে কোম্পানী (সংশোধন) বিল-২০২০ পাসের আগে আনীত জনমত যাচাই-বাছাই ও সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে সংসদ সদস্যরা বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে সেই জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী একথা বলেন।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, যতদিন পর্যন্ত নিজেদের উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হই, আমাদের যদি পরের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়, তাহলে তাদের অবস্থানের সাথে আমাদের অবস্থান পরিবর্তিত হয়। আমাদের দেশে প্রয়োজন প্রায় ২৫ লাখ টন, তারমধ্যে ৮-৯ লাখ টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। এটা ধারবাহিকভাবে চলে আসছে। ওই আমদানির ৮-৯ লাখ টনের মধ্যে ৯০ ভাগই ভারত থেকে আনতে হয়েছে। ভারত উদ্বৃত্তের দেশ তারা পেঁয়াজ রফতানি করে। কিন্তু তারা গত ২৯ সেপ্টেম্বর রফতানি বন্ধ করে দিল। এরপর বিকল্প বাজার থেকে আমাদের আনতে সময় লেগেছে। বিকল্প মার্কেট থেকে পেঁয়াজ আনতে ৪৫-৫০ দিন সময় লেগেছে।
তিনি বলেন, এবার ভারতেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫০ রূপিতে উঠেছিল। এবার প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামী ৩ বছরের মধ্যে আমরা উদ্বৃত্তের দেশ হব।
তিনি সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার নিজের এলাকায় প্রত্যেকে একটু প্রোঅ্যাকটিভ হন। একটু পেঁয়াজ লাগাইয়া দেন না কেন? একটা সময় তো নিশ্চয়ই স্বয়ংসম্পর্ণ হতে হবে। এবার চোখ খুলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি এই বিপদ সম্পদে রূপান্তরিত করব।
এরআগে একদিন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছিলেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর নাম গ্রিনিজ বুকে নাম লেখানো যেতে পারে। তার জবাবে মন্ত্রী বলেছেন, একজন সদস্য বলেছেন পেঁয়াজের দামের জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীকে গ্রিনিজ বুকে নাম লেখানো যেতে পারে। আমি অপেক্ষা করতে বলব, তিন বছর পর আমরা যখন উদ্বৃত্ত করব, রফতানি করব তখন তিনি এই অনুরোধটা পাঠাবেন। তখন এই অনুরোধ পাঠান বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি সফল মন্ত্রণালয়। বিপদ আসতে পারে সইতে হবে।
মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, দেশের মানুষ তো খুব সমস্যায় আছে। আপনি মন্ত্রী হওয়ার পর ২০০ টাকা কেজি হলো পেঁয়াজের মূল্য। এইটাকে কমাতে পারেন না আপনি আইন পরির্তন করার জন্য আসছেন। দেশের মানুষ চিন্তায় আছে। সামনে রোজা , রোজার মধ্যে মানুষ তো পেঁয়াজু আর খাবে না। এটা জনগণের খাওয়া সম্ভব না। আগামী রোজার মধ্যে পেঁয়াজ লবণ তেল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি হবে না এই গ্যারান্টি দিতে পারবেন?
পীর ফজলুর রহমান বলেন, তিনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমাদের পেঁয়াজ এখন গিফট আইটেমে পরিণত হয়েছে। এই গিফট আইটেম থেকে পেঁয়াজকে সবজিতে আবার নিয়ে যাবেন কিনা? মানুষ বিয়েতে যায় অন্য কোনো গিফট নিয়ে যায় না পেঁয়াজ নিয়ে যায় ২/৩ কেজি। এটি থেকে কিভাবে মানুষকে রক্ষা করবেন।
আগামী রমজান উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, গত তিন মাসে ৩০০ জায়গায় আমরা ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ দিচ্ছি। আগামী রমজান মাস উপলক্ষে ৩০ হাজার টন ভোজ্য তেল, ৩০ হাজার টন চিনি ব্যবস্থা করে রেখেছি। গত রমজানের তুলনায় দশ গুণ শক্তি নিয়ে বাজারে থাকব।