বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বছরব্যাপী অনুষ্ঠান মুজিববর্ষ শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত চলবে মুজিববর্ষের নানা কার্যক্রম।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা করতে সংসদে বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২২ ও ২৩ মার্চ দুই দিন এ অধিবেশন চলবে।
কথা ছিল, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভালো করে জানেন, এমন বিদেশি বন্ধুদের আনা হবে বিশেষ অধিবেশনে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সেই পরিকল্পনা থেকে পিছু হটতে হয়েছে সংসদ সচিবালয়কে। অনেক বিদেশি অতিথির আসা নিশ্চিত হলেও আপাতত আর কেউ আসছেন না। তাই বিশেষ অধিবেশনের সেই আকর্ষণ আর থাকছে না।
বিশেষ অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের (এমপি) বাইরে কোনো আলোচক থাকছেন না। আগামী রোববার (২২ মার্চ) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভাষণের মধ্য দিয়ে অধিবেশন শুরু হবে। ওই দিন সকাল ১১টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হবে।
এর আগে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২২ মার্চ সকাল ৯টায় সংসদ নেতাসহ অন্যান্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর অধিবেশনে যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লোক সমাগম এড়িয়ে চলতেই সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সংসদ।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে ২২ মার্চ রাষ্ট্রপতির ভাষণের মধ্যে দিয়ে অধিবেশন শুরু হবে। এরপর কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে প্রস্তাব সাধারণ উপস্থাপন করবেন চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী। অন্য একজন সেই প্রস্তাব সমর্থন করবেন। তারপর দুই দিনব্যাপী প্রস্তাব সাধারণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। আলোচনা শেষে সেই প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রীসহ ৭৯ জন সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর জীবন কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন বলে চূড়ান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রথম দিন ৩৯ জন এবং দ্বিতীয় বা শেষ দিনে ৪০ জন সংসদ সদস্য আলোচনা করবেন। এরই মধ্যে আলোচকদের আলোচনার বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
আলোচনায় বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে বিষয়গুলো উঠে আসতে পারে, সেগুলো হচ্ছে-ভাষা আন্দোলন ও আওয়ামী লীগ গঠন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিত্ব গ্রহণ এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পায়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, ১৯৫৬ সালে সরকারে আওয়ামী লীগ-এসব বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন, বঙ্গবন্ধুর সামরিক শাসন বিরোধী অবস্থান ও ১৯৬২ সালের ছয় দফা আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ, আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬ দফা দাবি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ’৭০ এর নির্বাচন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের ভাষণ, অসহযোগ আন্দোলন এবং ২৫ মার্চ গণহত্যা।
এছাড়া বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার অবস্থান, গণপরিষদ গঠন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গঠন, বাংলাদেশের সংবিধান ও বঙ্গবন্ধু, জনপ্রশাসন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও অবদান, প্রতিরক্ষা নীতিমালা ১৯৭৪ প্রণয়ন, বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক রাজনৈতিক চিন্তাধারা ও পারিবারিক জীবন আলোচনায় স্থান পাবে।
দুই দিনের অধিবেশনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর জীবন কর্ম নিয়ে আলোচনা হবে। এজন্য এটি বিশেষ অধিবেশন।
এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩১ জানুয়ারি ও ১৮ জুন সংসদে বিশেষ অধিবেশন বসেছিল। সেখানে সাবেক যুগোস্লাভ প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি ভাষণ দিয়েছিলেন। এবার করোনার প্রভাবে বিদেশি কোনো বিশিষ্ট জন নন, শুধু সংসদ সদস্যরাই আলোচনা করবেন।