করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও জীবন-জীবিকা রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে বাজেট দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে বলছেন বাজেট একটু বেশি, আমরা খুব বেশি আশাবাদী, হ্যানো ত্যানো। সব সময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর জন্য সবকিছু স্থবির। আমরা আশাকরি, এই অবস্থা থাকবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে। যদি হঠাৎ উত্তরণ ঘটে আগামীতে আমরা কি করবো সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি। এরইমধ্যে আমরা প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এই ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত যখন হবে তখন ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়া প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ কর্মসুরক্ষা ও নতুন কর্মসৃজন হবে।
সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা ও সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা একথা বলেন।
বাজেট প্রস্তাবনা যেসকল বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ অর্জন করবো বলে নির্ধারণ করেছিলাম। তবে প্রথম ৮ মাসে আমরা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জন করেছিলাম। করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সেটা কমে যায় এবং সংশোধন করতে বাধ্য হই। যেটা ৫ দশমিক ২ শতাংশ ধার্য্য করেছি। আমরা আশাকরি ২০২১ সালে বিশ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসবে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে ধরে নিয়ে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। একই সময় নিম্নমূল্য স্থিতি ধরে রাখার পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
তিনি বলেন, অনেকে বলছেন বাজেট একটু বেশি, আমরা খুব বেশি আশাবাদী হ্যানো, ত্যানো। সব সময় আমাদের একটা লক্ষ্য থাকতে হবে। কোভিড-১৯ এর জন্য সবকিছু স্থবির। আমরা আশাকরি যে না অবস্থা থাকবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে। যদি হঠাৎ উত্তরণ ঘটে আগামীতে আমরা কি করব সেটা চিন্তা করেই এই পদক্ষেপ নিয়েছি।
সংসদ নেতা বলেন, যদি না করতে পারি, যদি কোভিড-১৯ শেষ না হয়, হয়তো বা পারবো না বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি থাকা দরকার বলে আমরা মনে করি। সেজন্যই আমরা উচ্চাবিলাসী বাজেট দিয়েছি। দেব এই জন্য যে আমাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা আছে, বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে। তাদের জীবনমান উন্নত করবো।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলনের যে অনুমানসমূহ বিবেচনা করা হয়েছে তা তুলে ধরে তিনি বলেন, (ক) করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে আমাদের অর্থনীতির উৎপাদন ব্যাহত হলেও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর কোনো ক্ষতি হয় নাই। যা প্রাকৃতি দুর্যোগ বা যুদ্ধের সময় সাধারণত হয়ে থাকে। (খ) সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির ফলে কর্মসৃজন ও ব্যক্তি আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে এবং প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ সুষ্ঠ বাস্তবায়ন হলে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মহামারির পূর্ব অবস্থায় চলে আসবে। (গ) অক্টোবর বা নভেম্বর মাসের মধ্যে করোনার প্রতিষেধক টিকা বাজারে চলে আসলে ইউরোপ আমেরিকায় জীবন যাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে আমাদের রফতানি আয় কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী অবস্থায় আবার ফিরে যাবে। (ঘ) বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য খুব কমে গিয়েছিল কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশাবাদী এর ফলে বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রবাস আয়ের বর্তমান সংকটও কেটে যাবে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সরকারের গৃহিত পদক্ষেপের বিষয়গুলো তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, আমরা ৪টি কৌশলগত কর্মপন্থা ঠিক করেছি। তা হচ্ছে- সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করণ, কর্মসৃজনকে প্রাধান্য দেওয়া বিলাসী ব্যয় নিরুসাহিত করা এবং কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় পিছিয়ে দেওয়া। আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন। সামাজিক সুরক্ষার আওতা বৃদ্ধি করণ ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
সংসদ নেতা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনীতির প্রভাব কার্যকরীভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫ কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা পেয়েছে। ১৯টি প্যাকেজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত যখন হবে তখন ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ সুবিধা পাবে। এছাড়া প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ কর্মসুরক্ষা ও নতুন কর্মসৃজন হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এসব কিছু বিবেচনায় নিয়ে অর্থমন্ত্রী ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৭তম বাজেট, বর্তমান মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট। স্বাধীনতার পর পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩টা বাজেট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কাজেই সর্বসাকুল্যে ২০টি বাজেট আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশকে উপহার দিয়েছে। এই বাজেটে অর্থনীতি পুনর্গঠন এবং করোনা মোকাবিলায় জীবন ও জীবিকা রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তাছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসৃজন এবং সামাজিক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা এগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।