প্রস্তাবিত ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অল্প সময়ে ২ হাজার ডাক্তার ও ৬ হাজার নার্স নিয়োগ দিয়েছি। আরও ২ হাজার ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। আরও ৪ হাজার নার্স নিব। সেই নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে দিয়েছি। শিগগিরই তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’
সোমবার (২৯ জুন) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কার্ডিওগ্রাফার এবং ল্যাব অ্যাটেনডেন্টের ৩ হাজার নতুন পদও সৃষ্টি করেছি। নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্পূর্ণ সরকারি খরচে হোটেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
এ সময় সংসদ নেতা বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে ডাক্তার, নার্সদের খাওয়ার খরচ হিসেবে ২০ কোটি টাকা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আমরাও এটা তদন্ত করে দেখছি। এতো অস্বাভাবিক কেন হবে। এটা স্বাভাবিকভাবেই অস্বাভাবিক মনে হয়। যদি কোনো অনিয়ম হয় সেটাও ব্যবস্থা নেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয় ও করোনা চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছি। আরও একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়।’
করোনায় বিভিন্ন দেশের আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ভারতে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ০৮ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানান্থে দেখা যায় যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করায় বাংলাদেশের করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার নিম্ন পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হয়েছি। যদিও একটা মৃত্যুও কাম্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ অনুমোদন করেছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। হয়ত বেঁচে থাকব না। কাজ করে যাচ্ছি, কর্মপন্থা দিয়ে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে যারা আসবে তারা যেন একটা গরীব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া আগামী অর্থ বছর হতে ৫ বছর মেয়াদী অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। সেটা এই জুলাই থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্যে থাকবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘সামনে যে সংকটই আসুক না কেন আওয়ামী লীগ সরকার তা শক্তভাবে মোকাবিলা করবে এবং দেশের মানুষকে অভুক্ত থাকতে দেবে না। আমাদের খাদ্য চাহিদা ৩ কোটি ৭৫ লাখ উৎপাদন, হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ। এবছর আমাদের উদ্বৃত্ত আছে। এই উৎপাদন অব্যাহত রাখব।’
তিনি বলেন, ‘বাজেট বাস্তবায়নে অতীতে কখনো ব্যর্থ হই নাই। ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না। আমরা কখনো হতাশায় ভুগি না। আমরা সব সময় লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মপরিকল্পনা পুন:নির্ধারণ করতে হয়। এই বাজেটও বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাভাইরাস কার্যকরভাবে মোকাবিলা করে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের জনবান্ধব উন্নয়নমুখী এই বাজেট সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাব। যত বাধা আসুক তা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, এগিয়ে যাচ্ছে।’