শেখ কামাল খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:29:51

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন বলে মত প্রকাশ করেনে আলোচকরা।

বুধবার (৫ আগস্ট) রাতে শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তারুণ্যের জেগে ওঠার নাম শেখ কামাল’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

দলের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের সহযোগিতায় আয়োজিত এই বিশেষ ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অনলাইন মিটিং প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক হারুন-উর-রশিদ, সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক অঘোর মন্ডল এবং আবাহনীর প্রথম অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার এবং সিনিয়র ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক ছাত্রনেতা ও কলামিস্ট সুভাষ সিংহ রায়।

শেখ কামালের স্মৃতিচারণ করে নাট্যজন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘উনি (শেখ কামাল) শেখ মুজিবুর সন্তান এমন কোন দাম্ভিকতা ছিল না। ছিলেন সাধারণ মানুষের মতই। জাতির একটি সংস্কৃতির যা যা উপাদান দরকার ছিল তার ভিত্তি কিন্তু শেখ কামাল গড়ে দিয়েছিলেন। আজ তা তরুণ প্রজন্মের কাছে লালিত হচ্ছে।’

নাট্যব্যক্তিত্ব ম হামিদ বলেন, ‘আমরা যখন একসাথে ছিলাম তখন আমাদের মাঝে সম্পর্ক ছিল অন্য রকম। স্বাধীনতার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক চর্চা দেখার মত ছিল। শুধু রাজনীতিতেও না শেখ কামালের বিচরণ ছিল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও।’

আলোকচিত্রী পাভেল রহমান বলেন, ‘১৯৭৪ সালে কামাল ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে, ৩২ নম্বরের বাড়িতে। আমি বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলছিলাম নীচ তলায়, খেলাঘরের বাচ্চারা বঙ্গবন্ধুর গলায় লাল স্কার্ফ পড়িয়ে দিচ্ছিলেন। সেসময় বারান্দায় কামাল ভাইকে দেখলাম। আমি সালাম দিয়েই সামনে যেতেই আমাকে তিনি কেক হাতে দিলেন। দিয়ে বললেন, কেমন আছো?। আমি এতো চমকে উঠেছি! যে আমার সাথে উনার তখনো পরিচয় নেই, কিন্তু উনি এভাবে বললেন! তারপর তিনি বললেন- তুমি কোথায় কাজ করো? আমি বলতেই তিনি বললেন, তুমি কি আমাদের আবাহনীর ছবি তুলে দিবে? তখন তিনি আমাকে আবাহনী ক্লাব চিনিয়ে দিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এরপর আমরা ক্লাব থেকে গণভবনে আসছি বঙ্গবন্ধুর কাছে। আমি একে একে অনেক ছবি তোলার পর হঠাৎ করেই কামাল ভাই আমাকে ডাক দিলেন- 'পাভেল, পাভেল! আমিও ভাবছিলাম কি জানি কি ছবি তুলবেন হয়তো। কাছে যেতেই উনি আমাকে পেছন থেকে একটু ধাক্কা দিয়েই বঙ্গবন্ধুর দিকে আগিয়ে দিলেন! আমি বুঝে উঠার আগেই এর মধ্যেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, আব্বা, আব্বা! ও হচ্ছে আমাদের আবাহনীর ফটোগ্রাফার। বলতেই আমি তো অবাক! আমাকে পরিচয় করিয়ে দিবেন, আমার মধ্যে কি আছে পরিচয় করিয়ে দেবার! বঙ্গবন্ধু রিল্যাক্স করে বসছিলেন, যখন শুনেছেন আবাহনীর ফটোগ্রাফার তিনি একটু নড়েচড়ে বসলেন। এরপর কামাল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন- তোদের আবাহনীতে আবার ফটোগ্রাফার ও আছে?। কামাল ভাই বললেন, হ্যা আব্বা আছে, ওর নাম পাভেল। এরপর তো কামাল ভাইয়ের সাথে আরও অনেকবার দেখা হয়েছে, সবগুলোই স্মরণীয় ঘটনা হয়ে আছে। কামাল ভাইয়ের যে দিকটা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলো উনার মনটা একদমই কিশোর, এতো কিশোর মন তার! এতো সবসময় উনার চঞ্চলতা উনার মাঝে, মনে হতো আমরাই যেন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!’

সাংবাদিক অঘোর মন্ডল একাত্তরের দিনগুলির স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নামে যে দলটা হলো, সেই দলের ভেতর কেন যেন জুনিয়র-সিনিয়রের ভেতরে একটা অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। সেই অন্তর্দন্দ্ব সুরাহা করার জন্য শেখ কামাল সেখান উপস্থিত, তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বললেন- 'ঠিক আছে, আমরা সবাই এখানে এসেছি। আগেই দেশ স্বাধীন করতে হবে। দেশ স্বাধীনের পরে আমরা একটা দল করবো, আমরা একটা ক্লাব করবো, সেখানেই ফুটবলের নতুন কিছু করবো। এই যে নতুন কিছু করার চিন্তা। ২৬ বছর ১০ দিনের জীবন যার, তার জীবনের প্রতিটি বাঁকেই বোধহয়, বাক পরিবর্তনে নতুন কিছু সাক্ষ্য রেখে গেছেন, নতুন কিছু করার।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর