ঢাকা-১৮ আসনে জাপার প্রার্থী দৌড়ে যারা

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 16:17:38

ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে লড়তে চায় জাতীয় পার্টি। এ জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে দেন-দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন দু’জন শীর্ষ নেতা।

সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যাড. সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শূন্য হয় এই আসনটিতে এখনও তফসিল ঘোষণা হয়নি। তারপরও জাপার মধ্যে বেশ তোড়জোড় লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যে ওই আসনের বিভিন্ন থানা ওয়ার্ডের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পার্টির চেয়ারম্যান। বৈঠকে আগাম হুশিয়ারি দিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলেই তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর এই আসনে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে প্রথম তিন জনের নাম শোনা গেলেও, সম্প্রতি পার্টির মহাসচিবের নামও যুক্ত হয়েছে। পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বিগত নির্বাচনে চট্টগ্রাম থেকে মহাজোটের মনোনয়ন পেতে বঞ্চিত হন। পরে রংপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাকর্মীদের বাঁধার মুখে মনোনয়ন তুলে সেখান থেকে সরে আসেন।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বাবলুর বিগত নির্বাচনে মহাজোট থেকে মনোনয়ন না পাওয়াটি ছিল সকলের কাছেই অবাক করার। নেতাকর্মীরা মনে করছেন এবার হয়তো মহাসচিবকে আসনটি ছেড়ে দিতে পারে আওয়ামী লীগ। আসনটি পেতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ঢাকা-১৭ আসনকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এক সভায় বলেছেন, ঢাকা-১৭ আসনটি ছিল জাতীয় পার্টির। আমাদের পার্টির চেয়ারম্যান এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। আসনটি আমাদের, আমরা বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ছেড়ে দিয়েছি। সে কারণে পাশের আসন ঢাকা-১৮ আমরা চাইতেই পারি।

এই আসনে পার্টির মহাসচিবের বাইরে মনোনয়নের দৌড়ে আরও তিন জনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এরা হলেন প্রেসিডিয়ামের সদস্য চিত্রনায়ক সোহেল রানা (মাসুদ পারভেজ), উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পার্টির চেয়ারম্যানের সহধর্মীনী শেরিফা কাদের ও যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধা। প্রথম দিকে সোহেল রানার নামেই বেশি আলোচিত হচ্ছিল। ফেসবুকেও কয়েকজন নেতাকে তার নামে স্ট্যাটাস দিতে দেখা গেছে। কেউ কেউ তার পক্ষে নির্বাচনের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেছেন। যদিও রাশভারি সোহেল রানা এই বিষয়ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি।

ঈদের আগে থেকে আরেকজন প্রার্থীর নামে জোর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তিনি হচ্ছেন পার্টির চেয়ারম্যান সহধর্মীনী ও পার্টির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য শেরিফা কাদের। শেরিফা কাদের সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার দীর্ঘদিন ধরে বাসিন্দা। এই এলাকায় বিভিন্ন সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শেরিফা কাদের উত্তরা কালচারাল সোসাইটির টানা ১২ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট। এ ছাড়া উচ্ছ্বাস ললিতকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা। শিল্পী মানুষ শেরিফা কাদের দীর্ঘদিন গানের শিক্ষকতা করেছেন। এলাকার অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। পার্টির মধ্যম সারির বড় একটি অংশ চাচ্ছেন স্থায়ী বাসিন্দা শেরিফা কাদের ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী হোক।

শেরিফা কাদের বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি এখনও নির্বাচন করবো এ সিদ্ধান্তও নেইনি। আবার করবো না এমন সিদ্ধান্তও নেই নি। আমি নীরবে সোশ্যাল ওয়ার্ক পছন্দ করি, অনেকদিন ধরেই এই এলাকার সোশ্যাল ওয়ার্ক করে যাচ্ছি। পার্টির নেতাকর্মীরা অনেকেই দাবী করছে যেনো আমি প্রার্থী হই। সময় আসুক পরিস্থিতি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেবো। পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আপনার এ বিষয়ে কোনো আলাপ হয়েছে কি-না। জবাবে খানিকটা হাসি দিয়ে বলেন, এখন এ বিষয়ে কোনো আলাপ হয় নি। তবে তিনি (জিএম কাদের) আমাকে বলেছেন পার্টির অনেক নেতাকর্মী চাচ্ছে আমাকে প্রার্থী করার বিষয়ে।

জাতীয় তরুণ পার্টির আহ্বায়ক ও পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন মৃধা অনেকদিন ধরেই এই আসনে নানা রকম রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি বরাবরেই মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। বিগত নির্বাচনেও তিনিই প্রায় চূড়ান্ত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইদুর রহমান টেপাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। যদিও তিনি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল থেকে বিরত ছিলেন। মৃধা এবারও মনোনয়ন পেতে লবিং করে যাচ্ছেন। কিন্তু মহাসচিব এবং পার্টির চেয়ারম্যানের সহধর্মীনীর নাম আসায় তিনি কিছুটা ব্যাক ফুটে চলে গেছেন। তবে হাল ছেড়ে দেন নি জাকির হোসেন মৃধা।

২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বণ্টন করলে ঢাকায় জনসংখ্যার অনুপাতে ১৩টি থেকে বেড়ে ২০টি আসন করা হয়। সেই সময়ে ঢাকা-১৮ আসন সৃষ্ট হয়।প্রথম নির্বাচনের মহাজোটের প্রার্থী সাহারা খাতুন বিএনপির প্রার্থী আজিজুল বারী হেলালকে বিপুল ভোটের হারিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে প্রতিবারেই নির্বাচিত হয়ে এসেছেন আওয়ামী লীগের এই প্রভাবশালী নেতা। ৯ জুলাই সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। মোট ভোটার রয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৩ জন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ঢাকা-১৭ আসন ছিলো আমাদের, এই আসনটি আমরা মহাজোটকে ছেড়ে দিয়েছি। আমরা আশা করছি, ঢাকা-১৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টি প্রার্থী নির্বাচন করতে পারবেন। এ ব্যাপারে মহাজোটের সাথে আলোচনা করা হবে।

ঢাকা-১৮ উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাঠে থাকবে।একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি প্রতিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করছে। যারা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সাথে কাজ করবেনা, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর