এরশাদকে গায়ের জোরে স্বৈরাচার বলা হয়: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-23 01:48:37

কোনোভাবেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে স্বৈরাচার বলা যাবেনা। তাকে গায়ের জোরে স্বৈরাচার বলা হয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয়ে এক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন প্রকৃত গণতন্ত্রমনা রাষ্ট্রনায়ক। আদালত তাকে বৈধ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এরশাদের সামনে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সুযোগ ছিলো। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সংবিধানকে সমুন্নত রেখেই তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর পর থেকেই দেশ উল্টো পথে হেটেছে। ৯৬ সালের পর থেকে পরপর চারবার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, বিচার বহির্ভূত হত্যা বেড়েছে। জাতীয় পার্টির শাসনামলে হত্যার রাজনীতি ছিলোনা।

তিনি আরো বলেন, তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী সংসদীয় সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছে। সংবিধানে ৭০ ধারা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল স্বাদ ধ্বংস করেছে। ৭০ ধারার কারণে সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দিতে পারেনা। তাতে সরকার প্রধান যা করতে চায় তার বাইরে কিছুই করা সম্ভব হয়না। তাই ৭০ ধারার কারণে সরকারে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়, যা স্বৈরতন্ত্রের পর্যায়ে।

তাই সংসদীয় পদ্ধতির প্রকৃত স্বাদ রক্ষা করতে ৭০ ধারা বিলুপ্ত করতে হবে অথবা অন্য কিছু ভাবতে হবে সরকার পদ্ধতি নিয়ে। ৭০ ধারা বিদ্যমান থাকায় নির্যাতন ও দুর্নীতি বেড়ে যায়। সুশাসনের অভাব হয় এবং আইনের শাসন কার্যকর করা যায় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ৯১ সালে জাতীয় পার্টির জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। এরশাদসহ পার্টির শীর্ষ নেতাদের জেলে আটকে রাখা হয়েছে। প্রচার-প্রচারণা করতে দেয়া হয়নি প্রার্থীদের। জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করতে চেয়েছিলো তারা। জাতীয় পার্টিকে মাঠেই থাকতে দেয়নি। কিন্তু সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় জাতীয় পার্টি প্রতিকূল পরিবেশেও ৩৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছিলো। জেলে থেকেই এরশাদ ৫টি করে আসনে বিজয়ী হয়েছেন ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে।

জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই ডা. মিলন ও নূর হোসেনকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৩০ বছরেও ডা. মিলন ও নূর হোসেনর হত্যার বিচার হয়নি। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই এই ষড়যন্ত্রমূলক হত্যার বিচার করবে।

তিনি বলেন, কেউই ক্ষমতা ছাড়তে চায়না। কিন্তু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রক্তপাত চাননি বলেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন।

দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ১৯৯১ সালে তিন জোটের রূপ রেখায় মানবতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের লালন করা হয়েছে। ৯১ সালের নির্বাচনেই নিজামী ও মুজাহিদকে এমপি বানানো হয়েছিলো। বর্তমানে দেশে ভোটাধিকার নেই, মানুষের কথা বলা অধিকার নেই। নির্বাচনের উপর আস্থা নেই দেশের মানুষের। তছনছ হয়েছে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। আমরা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চাই।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এস.এম. ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, আব্দুস সাত্তার মিয়া, মাননীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মিসেস শেরিফা কাদের, মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, জহিরুল ইসলাম রুবেল, মেহেরুন্নেসা খান হেনা, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান এমপি, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোঃ বেলাল হোসেন, কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবিএম লিয়াকত হোসেন চাকলাদার প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর