বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই ‘ট্রেন-বাস-লঞ্চে’ আ.লীগের নির্বাচনী প্রচারণা!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

তপন কান্তি রায়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 22:36:24

শোষণ নি‌র্যাতন থেকে দেশকে মুক্ত করতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রেন-বাস-লঞ্চে করে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছিলেন। তার সেই স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়তে আওয়ামী লীগ টানা দুইবার সরকারের ক্ষমতায় থেকে দেশের যে উন্নয়ন কর্ম করছেন সেইসব উন্নয়ন জনগণের নজরে আনতেই এবার বঙ্গবন্ধুর পথেই নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন দলটি।

নি‌র্যাতিত বাঙালির ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে সত্তরের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু যেমন উত্তরবঙ্গে গেছেন ট্রেনে; তেমনি লঞ্চে গিয়েছিলেন দক্ষিণাঞ্চল। পাকিস্তান শাসকের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে ঘুরে বেরিয়েছেন ট্রেনে-লঞ্চে।

এর আগেও ১৯৫৪ সালে তেমনি গেছেন প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে। কখন নৌকায় আবার কখনওবা ট্রেনে। তিনি বুঝাতেও সক্ষম হয়েছিলেন অপমর জনতাকে পাকিসস্তানের শোষণের কথা। স্বাধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে মুক্তও করছেন শোষণ আর বঞ্ছনার হাত থেকে।

বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন; তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও ১৯৯৬ নির্বাচনের আগে ও ২০০০ সালের পরে ট্রেনে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিলেন ট্রেনে।

আসন্ন একাদশ নির্বাচনকে সামনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মসূচি জনতার কাছে পৌঁছাতে উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতৃত্বে এবার সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় রওনা হয়েছে দলটি।

এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর উত্তরবঙ্গে ট্রেনযাত্রা করেছে আওয়ামী লীগ। যাত্রা পথে স্টেশনে স্টেশনে নির্বাচনী পথসভাও করে দলের নেতারা।

ট্রেন বাস আর লঞ্চে নির্বাচনীর প্রচারণার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের রাজনীতির দিকনির্দেশক ও আদর্শ বঙ্গবন্ধু; আমরা তাঁর রাজনৈতিক দিক নির্দেশনাকেই অনুসরণ করি।

‘সেই সময় জনগণকে সম্পৃক্ত; এভাবে (ট্রেন-লঞ্চ ) বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা করেছিলেন। শেখ হাসিনা ২০০১ সালে নির্বাচনে প্রচারণায় ট্রেনে সিলেট এবং খুলনা থেকে সৈয়দপুর গিয়েছিলেন।

এসময় সৈয়দপুরের উদ্দেশ্য যাত্রাপথে নাটোরে গুলি করেছিল বিএনপি সন্ত্রাসীরা বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার; সেই উন্নয়ন জাগরণের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততায় জন্য নির্বাচনের প্রচারণা চলছে।

ট্রেন বাস ও লঞ্চে নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি ডিজিটাল গণমাধ্যমেও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণা করছেন বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানের গণমাধ্যম এখন অনেক শক্তিশালী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নির্বাচনী প্রচারণা বেশি হবে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্যই এ কর্মসূচি।’

বঙ্গবন্ধু ট্রেন-লঞ্চে নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন বলেও জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্‌্য ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধু দেশের অাপামর জনতার কাছে বাঙালির মুক্তির কথা তুলে ধরেছিলেন। সেসময়ে যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ছিল বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। সেগুলোতে করে বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা করেছিলেন, তেমনি বাঙালির মুক্তির দাবিগুলো তিনি তুলে ধরেছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে। এমনকি নৌকায় করেও নির্বাচনী প্রচারণার করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

এই নির্বাচনী প্রচারণা বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করেই করছে আওয়ামী লীগ-বলে জানান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন অর রশিদ।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া আওয়ামী লীগ। তারা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তি আর উন্নত জাতি প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারেননি। যে কারণে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার, আদর্শেরও উত্তরাধিকার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর যে আর্দশ ও তার দেখানো সে পথে তিনি চলছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর্দশ বাস্তবায়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যা কিছু করছে। নির্বাচন হোক; নির্বাচনী প্রচারের কৌশল হোক; যে কর্মসূচি বা পরিকল্পনা হাতে নেয়; বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ও তার নির্দেশিত পথ অবলম্বন করে আসছে এবং তার সেই রাজনৈতিক শিক্ষা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ চলে।

‘বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে আওয়ামী লীগ অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রচার যদি বলি; তাও বলা যেতে পারে বঙ্গবন্ধুর পথেই আওয়ামী লীগ হাঁটছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট ও সত্তরে নির্বাচনে ট্রেন,বাস ও লঞ্চে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের জনগণের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন।

এ সময় বঙ্গবন্ধু লঞ্চের করে বরিশালের রাজাপুরে নির্বাচনীর প্রচারণার স্মৃতিচারণও করেন এই শিক্ষক। সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন করেছিলেন বলেও জানান ।

অধ্যাপক হারুন বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন লঞ্চের করে বরিশালের রাজাপুরে নির্বাচনীর প্রচারণায় যান; তখন আমি নিজেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজাপুরে হ্যান্ডসেইক করেছিলাম এবং তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) রিসিভও করেছিলাম।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণা একটি গণসংযোগ। গণপরিবহন, বাস, লঞ্চ ট্রেনের মাধ্যমে দ্রুত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব ছিল সে সময়ে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। কাজেই সেই সময়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে এগুলো ব্যবহার করেছিলেন।’  

এ সম্পর্কিত আরও খবর