অপরাধ কী শুধু আওয়ামী লীগ নেতাদেরই!

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 03:09:03

রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের আদর্শ বা মত পছন্দ না হলে সেই দলের নেতাকর্মীর বসতভিটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া এটা কেমন রাজনীতি? শুধু বাড়ি ঘর নয় গৃহপালিত পশুও বাদ যায়নি নৃশংস ওই ধ্বংসযোগ্য থেকে। কোন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নয় কোন পারিবারিক বিভেদ নয় স্রেফ রাজনৈতিক মত পার্থক্যের জেরে একটি পরিবারকে সর্বশান্ত করে দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের উগ্র কর্মী সমর্থকরা।

গত ০৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়গঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় একটি রিসোর্টে এক নারী নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কিছু লোক তাকে আটকে রাখে। পরে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তার অনুসারী ভক্তগণ। সেই ঘটনার জের ধরে রাতের বেলায় নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এর মোগরাপাড়ায় সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বাড়িঘর ভাঙচুর ও তার ব্যবহৃত গাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। ঢাকা মেট্রো-গ-২০-১৫০৫ গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি। গাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শুধু গাড়ি ভাঙচুর করেছে তাই না। বাড়ির ভেতর ঢুকে ঘরের বেড়া ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শুধু নান্নুর বাড়ি বা গাড়ি নয় সোনারগাঁও এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি বেছে বেছে হামলা করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকরা।

স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন সেদিনের বর্ণনা দিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, সেদিন কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হেফাজতের লোকজন সবার মাথায় টুপি ওরা নারায়ে তাকবীর বলে লাঠি সোঠা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেছে বেছে যারা আওয়ামী লীগ করে তাদের বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে।

হেফাজতের এমন তাণ্ডবে নিরুপায় ছিল সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ। কেন্দ্র থেকে সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলায় তারা সেদিন পাল্টা কোন আক্রমণে যায়নি বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন। তাছাড়া সংঘাত বাড়বে এই চিন্তা থেকে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সোনারগাঁও এলাকা পরিদর্শন


 

হেফাজতের তাণ্ডবে বিধস্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি সমাবেদনা ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর দেখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, এরা ধর্ম ব্যবসায়ী এরা আসলে ধর্মকে শ্রদ্ধা করে না। ধর্মকে তারা তাদের ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং এই ধর্মকে পুঁজি করেই ধর্মান্ধ অল্প শিক্ষিত মাদরাসার ছাত্রদের প্রভাবিত করে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাস নৈরাজ্যেকর কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। এরা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম করে আসছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান করেছে। জাতির পিতাকে অশ্রদ্ধা করেছে জাতীয় পতাকা অসম্মান করেছে জাতীয় সঙ্গীতকে মানে না। এরা মূলত ’৭১ এর পাকিস্তানের পরাজিত শক্তি, পাকিস্তানের পেতত্মা। বিদেশি প্রভুদের খুশি করতে তারা এগুলো করে।

সেদিনের ঘটনায় সুনির্দিষ্ট লোকের বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এখনো মামলা করেন নাই, মামলা করবেন। আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দিযে বাংলাদেশ থেকে এই নৈরাজ্য দূর করব। শুধু তাই নয় এরপর থেকে ধর্ম ব্যবসায়ীদের নামেই হোক বা যুদ্ধাপরাধী ধর্ম ব্যবসায়ীদের নামেই হোক আর বিএনপি নামেই হোক না কেন এই বাংলাদেশে উন্নয়কে যারা বাধা সৃষ্টি করবে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করবে এগুলোকে আর বরদাস্ত করা হবে না। প্রত্যেক জেলা উপজেলায় সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সর্তক থাকবে, প্রস্তুত থাকবে প্রশাসনকে সহায়তা করবে। এদের কঠোরভাবে দমন করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী জনগণকে নিয়েই এদের প্রতিহত করবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ীরা মানবতার শত্রু, মানুষের শত্রু। তারা এই দেশকে তালেবানি রাষ্ট্র বানাতে চায়। আমরা কোন ক্রমেই এই বাংলাদেশকে কোন অপশক্তির হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। সাংবাদিক সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের শেকড় মূলোৎপাটন করতে হবে। এদের উৎখাত করতে হবে।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সিগঞ্জ -২ আসনের সংসদ সদস্য মৃনাল কান্তি দাস, সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাতসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলা সফরে যাবেন। সেখানেও হেফাজতে ইসলাম তাণ্ডব চালিয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর