বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি সিপিডিসহ বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য কাকাতুয়ার শেখানো বুলি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (৪ জুন) বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রস্তাবিত বাজেটে করোনাভাইরাস মহামারির বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি দাবি করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্বল অনুমিতি ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। বাজেটে অনুমিতি দুর্বল।
এদিকে নতুন বাজেটে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কোনো ‘জায়গা নেই’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসব বক্তব্যের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি তখন বাজেটের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার কোটি টাকা। সেই থেকে বার বছরেরর মাথায় আটগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বাজেটের অংক দাড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২০০৯ সালে মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ছয়’শ ডলার, আজকে মানুষের মাথাপিছু আয় পাকিস্তান ভারতকে ছাড়িয়ে ২ হাজার ২শ ২৭ ডলার হয়েছে।
প্রকৃত পক্ষে ৩০শে জুনের পর এই মাথাপিছু আয় আরও বাড়বে। কারণ যেই মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২শ ২৭ ডলার, সেখানে মে এবং জুন মাসের আয় ও রেমিটেন্স হিসেব করা হয় নি। সেই হিসেবে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়বে। এই যে মাথাপিছু আয় আমরা ভারতেকে ছাড়িয়ে গেলাম এটা কিন্তু ভারতের পত্র পত্রিকায় টেলিভিশনে আলোচনার ঝড় বইছে। কিন্তু আমাদের দেশে যারা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন, নানান সময় নানা মত দেন তারা এটি নিয়ে একটি বাক্য বলেছে এমন, শুনতে পাই নি। যেটি অত্যান্ত দুঃখ জনক।
সিপিডির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, অর্থনীতিবিদরা যারা সব সময় সরকারের নানা দোষ খোঁজেন, সরকারকে নানা পরামর্শ দেন তাদের মুখেও কোন কথা শুনতে পাই না। তারা কি দেশকে এবং দেশের মানুষের প্রসংশা করতে কুণ্ঠা বোধ করছেন? এটি আমার প্রশ্ন।
সিপিডির যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের অনুরোধ জানাবো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বাজেটগুলো বিশ্লেষণ করার জন্য। সিপিডি নয় আরও অনেকে বলেছে এই বাজেট ঝণ নির্ভবর, এই বাজেট ঘাটতি বাজেট।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরে বাজেটে ঘাটতি হচ্ছে ১৫.২ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ইউকেতে জিডিপির তুলনায় ঘাটতি বাজেট হচ্ছে ১৪.৩ শতাংশ, ভারতে জিডিপির তুলনায় ঘাটতি বাজেট ২০২০-২১ অর্থ বছরে জিডিপির তুলনায় ছিল ৯.৩ শতাংশ, জাপানে জিডিপির তুলনায় ঘাটতি ছিল ১২.৬২ শতাংশ।
আমাদের যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে সেখানে জিডিপির তুলনায় ৬.২ শতাংশ। ভারতের তুলনায় আমাদের ঘাটতি অনেক কম। গত বাজেটে ঘাটতি বাজেট ছিল ৬.১ শতাংশ। সেটি করোনা মাহামারিরর মধ্যেও সেই বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। সুতরাং তাদের কাছে অনুরোধ জানাবো পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাজেট গুলো বিশ্লেষণ করার জন্য। গত বাজেটেও যে ঘাটতি বাজেট সেটি যে বাস্তবায়িত হয়েছে সেটির জন্য একটু প্রসংশা করেন।
বাজেট বাস্তবায়ন না হলে দেশ এগিয়েছে কিভাবে এমন প্রশ্ন রেখে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের বাজেট বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৯৫ শতাংশ। কোন কোন বছর ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে এটা কেউ দেখে না। প্রতিবারই দেখবেন বাজেট ঘোষণার পর পরই বলা হয় এই বাজেট অবাস্তবায়ন যোগ্য, এই বাজেট উচ্চ বিলাশী নানা ধরনের কথা বলা হয়, এই বাজেটে জনগনের কোন কিছু নেই। কিছু সংগঠন কিছু রাজনৈতিক দল এগুলো বলে বেড়াচ্ছেন।
তাই যদি হয় তাহলে এই বার বছরে দেশটা এগিয়ে গেল কিভাবে? বার বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় এত উন্নিত হলো কিভাবে। বার বছরে দেশটা বদলে গেল কিভাবে?
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত বার বছরে উনারা সাধারণ মানুষের উন্নয়ন দেখতে পায় নি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে বিধায় আগে যেখানে এক মুঠো মোটা চাল খাবে এটাই ছিল মানুষের প্রত্যাশা। এখন মানুষ আর মোটা চাল খায় না, বাংলাদেশের মানুষ এখন আর অভুক্ত থাকে না। সন্ধার পরে কিংবা ভর দুপুরে শহরের অলিতে গলিতে কিংবা গ্রাম গ্রামান্তরে মা আমাদের একটু বাসি ভাত দেন এই ডাক শুনা যায় না। এইদেশে এখন সহজে ছেড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এখন খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না। বাংলাদেশে এখন আকাশ থেকেও কুড়ে ঘড় পাওয়া যায় না।
এটা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কারণেরই হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবরা গত সাড়ে বাড় বছর ধরে বাজেট ঘোষণার পর কিংবা সরকারের কোন পদক্ষেপে দেখতে পান না। তারা চোখ থাকতেও অন্ধ কান থাকতেও বদির। ফখরুল সাহেবরা দেখেও দেখেন না এবং শুনেও শুনেন না।