‘বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই’

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 18:10:48

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। তবুও একটা আদর্শকে ধারণ করেই পথ চলি। এটাই আমার শক্তি। যে স্বপ্নটা আমার বাবা দেখেছিলেন, ছোটবেলা থেকে তার মুখে যে কথাগুলো শুনেছি, সেটাকে আমার বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।’

তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি দেখতে চাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন দেখতে চাই। বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নত সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে গড়ে উঠবে, বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে চলবে, মর্যাদা নিয়ে চলবে, সন্মানের সাথে চলবে আমরা বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব এটাই আমার চাওয়া।’

রোববার (১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্ত ও প্লাজমা দান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। অপরদিকে, গুলিস্তান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তৃতা রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে খুলসুম স্মৃতি প্রমুখ।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ বাংলাদেশের মানুষের ওপর আমার বাবার অঘাত বিশ্বাস ছিল। তিনি সব সময় বিশ্বাস করতেন, বাঙালি কখনো তার গায়ে হাত দিতে পারবে না। আর পাকিস্তানিরা যখন চেষ্টা করেও হত্যা করতে পারেনি, বাঙালিরা কেন তাকে মারবে? অনেকেই অনেকভাবে খবর দিয়েছেন বা বলার চেস্টা করেছেন কিন্তু তিনি কখনো তা বিশ্বাস করেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখনই কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান বলেছেন- তখনই তিনি পাল্টা জবাবে বলেছেন- এরা আমার সন্তানের মতো, ওরা কেন আমাকে মারবে? আর সেই বিশ্বাসের চরম আঘাত দিল যেন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার অবাগ লাগে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের দলের যারা ছিল, তারা কী করে জড়িত থাকল? হত্যার বিচার করেছি, তবে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা সেটা এখনো চিহ্নিত হয়নি। তবে সেটা একদিন না একদিন বের হবে, এটা ঠিক। কিন্তু আমার একটাই কাজ। একটা ছিল প্রত্যেক্ষভাবে যারা হত্যা করেছিল তাদের বিচার করা আর সব থেকে বড় কাজ হলো- দেশের মানুষগুলোকে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশের মানুষের উন্নয়ন করা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে আমরা ১৫ আগস্ট যারা স্বজন হারিয়েছি, আমাদের কিন্তু কোনো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। খুনিদেরকে পুরস্কৃতি করা হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান খুনিদেরকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়, ব্যবসা করার সুযোগ দেয় বিপুল অর্থের মালিক করে দেয়। জিয়ার পথ ধরে জেনারেল এরশাদ এই খুনিদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়, রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেয়। এমনকি ভোট চুরি করে পার্লামেন্টের মেম্বার করে। তার থেকে এক ধাপ উপরে গিয়ে খালেদা জিয়া খুনি রশীদকে পার্লামেন্টে বসায় বিরোধী দলের নেতার চেয়ারে। আর এক খুনিকে পার্লামেন্টে মেম্বার করে এবং তাদেরকে পুরস্কৃত করে।’

‘১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকারে আসি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে খুনিদের বিচারের পথে নিয়ে এসে বিচারকাজ শুরু করি। প্রথম যেদিন বিচারের রায় হবে ৮ নভেম্বর, সেদিন খালেদা জিয়া তখন বিরোধী দলে, সেদিন হরতাল ডেকেছিল যেনো কোনোমতেই বিচারক কোর্টে যেতে না পারে, আর বিচারের রায় দিতে না পারে। কিন্তু সেই বিচারের রায় হয়েছিল’ বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এরপর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে বিচারকাজ শুধু বন্ধই করেনি, অনেক আসামিকে পুনরায় দূতাবাসে চাকরি দেয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়, এমনকি ৩ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের বিচারের তারিখ সুনির্দিষ্ট করা হয় তারপরেও খালেদা জিয়া একজন খুনিকে চাকরি ফিরিয়ে দেয় এবং প্রমোশন দেয়। প্রমোশন দিয়ে দেখাতে চেয়েছে যে এদেরে বিচার করা যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘একজন মৃত ব্যক্তিকে খালেদা জিয়া প্রমোশন দেয় এবং তাকে অবসরভাতা দিয়ে পুরস্কৃত করে। তারা ২০০১ সালে ক্ষমতা এসে খুনিদের আবার পৃষ্টপোষকতা করে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের অনেকে মতামত দিয়েছিল যে এটা আমাদের জন্য বোঝা ছিল, চলে গেছে ভালোই হয়েছে, এরা তো আর কোনো দিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পাকিস্তানি সেই সমস্ত লোক আর তাদের যে মতামত আর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তাদের চিন্তাধারা ও কার্যক্রম পর্যালোচনা করলেই দেখবেন তারা একই, তাদের মিলে যায়। তারাও ভেবেছিল এই বাংলাদেশ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আর যাতে না দাঁড়াতে পারে সেজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতার হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তারাই কিন্তু ক্ষমতাটা দখল করে। যে কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছর জাতির পিতা সময় পেয়েছিলেন, শূন্যহাতে যাত্রা শুরু করে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করে যান, সেই দেশটাকেই আবার ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করে সকল উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে নসাৎ করে দেয় উন্নয়ন কাজ। অর্থাৎ বাঙালি মাথা উঁচু করে বিশ্বে দাঁড়াক, বাংলাদেশ টিকে থাকুক বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকুক এটাই তারা চায়নি; এটাই হলো বাস্তবতা। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ হয় জঙ্গিদের দেশ, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, ক্ষুধার্থ মানুষের হাহাকার। দেশটাই ভিক্ষাকের ঝুঁড়ি হাতে নিয়ে নামে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু দেশের উন্নয়ন করাকে সব থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাই পেছনে কে বেশি ষড়যন্ত্র করেছে, কী করেছে সেদিকে না গিয়ে প্রথম কাজ ক্ষুধার্ত দারিদ্র্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের জীবনমান উন্নত করা। জাতির পিতা আমাদের যে স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, যে আদর্শের শিক্ষা দিয়ে গেছেন তিনি তো এটাই চেয়েছিলেন যে তার দল মানুষের পাশে থাকবে, দুর্যোগে মানুষের সাথে থাকবে, মানুষের কল্যাণে কাজ করবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর