জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ত থাকার নতুন তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে এসেছে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আর এ সত্য উদঘাটিত হবেই।
বুধবার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভায় এ কথা জানান তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে বিভিন্ন উৎস থেকে নতুন তথ্য উদঘাটিত হচ্ছে। ১৯৭৬ সালের ২ আগস্ট যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে প্রচারিত এক অনুষ্ঠানের একটি সাক্ষাৎকারকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, মেজর ফারুক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। কর্নেল ফারুকের স্বাক্ষরে সানডে টাইমস পত্রিকায় এক নিবন্ধনেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার কথা উঠে আসে। এছাড়া মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিপ্সু তার একটি বইতে বঙ্গবব্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়া সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরা হয়। জিয়াউর রহমানকে সাইকোটার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্গের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে অনেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকারের কথা বলেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর আমরা বিচারই চাইতে পারিনি।
হত্যাকাণ্ডের পর যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো, যারা বেনিফিসিয়ারী ছিলো জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের আলামত-দলিল দস্তাবেজ নষ্ট করার অপেচেষ্টায় লিপ্ত ছিলো। খুনিরা মনে করেছিলো বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা থামানো যাবে। এই লক্ষ্যে তারা জাতির সামনে থেকে সত্যকে আড়াল করতে চেয়েছিলো। কিন্তু সত্য হলো সূর্যের মতো সমুজ্জল। সূর্যকে ক্ষণিকের জন্য লুকিয়ে রাখা সম্ভব কিন্তু তিমির বিনাশী হিসেবে তার আবির্ভাব যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি মিথ্যার বেড়াজাল ছিন্ন করে সত্য উদ্ভাসিত হবেই একদিন।
দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন দেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। কূটনৈতিক প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য-অভিভাবক শূন্য করতে চেয়েছিলো মন্তব্য করে তিনি বলেন, সকল ষড়যন্ত্র অপেক্ষা করে মহাসাগর পরিমাণ শোককে ধারন করে বাংলাদেশকে নেতৃত্বে দিয়ে যাচ্ছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা।
সরকার করোনা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিলেও বিএনপি নেতারা একের পর এক নির্লজ্জ মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, জনগণের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, মিথ্যাবাদী এই গোষ্ঠীকে বরাবরের মতো প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি। পঁচাত্তরের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এই জাতিকে আবারও নেতৃত্বশূন্য করতে তারেক রহমানের প্রদত্ত মদদে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টায় নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। ধারাবাহিকভাবে খুনের রাজনীতি ও খুনিদের পৃষ্টপোষকতাই বিএনপির দলীয় আদর্শে পরিণত হয়েছে।
আগস্ট মাস এলেই বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতিহাসের অবাঞ্চিত সত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিএনপির অন্তর্জালা বেড়ে যায়। এজন্য তারা আগস্ট মাস নিয়ে তা কূটচক্রের জালে জড়িয়ে পড়তে চায়, ইতিহাসকে অস্বীকার করতে চায়, শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চায়।
এ সময় শোকাবহ আগস্টে মাসব্যাপী নেওয়া সীমিত কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালনের আহ্বান জানান।
সভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষা সম্পাদক সামছুন্নাহার চাঁপা, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।