আইএসআইয়ের সহায়তায় এদেশীয় খুনিরা ১৫ আগস্ট ঘটায়: নানক

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 07:08:00

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনও সেনা বিদ্রোহ ছিল না মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার আইএসআইয়ের মদদে এদেশীয় কিছু খুনিদের ভাড়া করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের ওপর। কাজেই জেনারেল জিয়া যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটি দিবালোকের মতো সত্য।

রোববার (১৫ আগস্ট) বিকেলে কৃষিবিদ কনভেনশন হলে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শোকসভা ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ’র যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়।

১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের পর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ডাক না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল তারপরে একটি মিছিল হল না? প্রতিবাদ- প্রতিরোধ হল না, কেন হল না? কাদের ব্যর্থতার কারণে সেদিন প্রতিরোধ হল না? কাদের দায়িত্ব ছিল সেদিন এই প্রতিবাদে-প্রতিরোধের ডাক দেওয়ার।

পাকিস্তানি আইএসআই’র গোয়েন্দা জিয়াউর রহমান আর খুনি মোশতাকরা সেদিন ষড়যন্ত্র করেছিল বলে অভিযোগ করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের অবদানের কথা স্মরণ করেন আওয়ামী লীগ নেতা নানক। তিনি বলেন, খুনি মোশতাক-জিয়ারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কেন কনফেডারেশন তৈরি করা? আর তাই যদি সত্য হয় তাহলে একাত্তরে দেশ স্বাধীনতার পরে মোশতাক-জিয়াকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কেন তাদের বিচার করা হল না?

তিনি আরও দাবি করেন, সেই কারণেই মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সঙ্গে পরাজিত হয়েছিল যে আন্তর্জাতিক শক্তি পাক-চীন-মার্কিন শক্তি আর এদেশের কিছু ষড়যন্ত্রকারী ঐক্যবদ্ধভাবে এক বিরাট জাল বিস্তার করেছিল।

স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো বিভিন্ন নামে বামপন্থী সশস্ত্র দল তৈরি করা হয়েছিল সেদিকে ইঙ্গিত করে নানক বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধকে দুই কুকুরের লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারে নাই। আর মুক্তিযুদ্ধকে যেহেতু মেনে নিতে পারে নাই সে কারণেই স্বাধীনতার পরে মুজিবের বাংলাদেশে পাটের গুদাম পুড়িয়ে দিয়েছে। সারাদেশে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। কুষ্টিয়ায় ঈদের জামায়াতে এমপিকে হত্যা করেছিল। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকে হত্যা করেছিল। একদিকে সশস্ত্র সংগঠন গড়ে উঠেছে আরেকদিকে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত শক্তির ভিতরে বিভাজন তৈরি করেছিল ওই সিরাজুল আলম খান দাদা ভাইরা।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, তারা এই মুক্তিযুদ্ধের শক্তির বিরুদ্ধে বিভাজন তৈরি করে জাসদ সৃষ্টি করেছে, সশস্ত্র গণবাহিনী সৃষ্টি করে সারাদেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। একদিকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছিল আরেকদিক বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তখনই বুঝা গিয়েছে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে দেশে।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কোনও সেনা বিদ্রোহের ঘটনা ছিল না দাবি করে নানক বলেন, বিষয়টি কি এমন-মোহাম্মদপুরের একটি বাড়িতে বসে একজন ডালিম একজন শাহরিয়ার একজন নূর একজন মাজেদ, একজন পাশা তারা বসে মদ খাচ্ছিল আর হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিল চল যাই ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুকে পরিবারসহ হত্যা করি। বঙ্গভবনকে দখল করে নেই।

তিনি বলেন, সেদিন তাদের রাত দশটা থেকে প্রস্তুতি হয়েছে। কামান মুভ করেছে, ট্যাংক মুভ করেছে। ওরা এয়ারপোর্টে একটা সভা করেছে। তারা প্যারেড করেছে। মেজর ডালিমরা বক্তৃতা করেছে। তাহলে কোথায় ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান? কোথায় ছিলেন সেনাবাহিনী উপপ্রধান জিয়াউর রহমান? কোথায় ছিলেন বিমানবাহিনী? কোথায় ছিলেন সামরিক গোয়েন্দা প্রধান? কোথায় ছিলেন এনএসআই প্রধান? কোথায় ছিলেন আইজি সাহেবরা? কি কারণে বঙ্গবন্ধুকে সেদিন অবহিত করা হল না? প্রশ্ন রাখেন নানক।

১৪ আগস্ট সকাল বেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা স্মরণ করে তৎকালীন এই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল কারা? ওরা সেনাবাহিনী না। সেদিন সেই আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি আর পাকিস্তানি আইএসআইয়ের মদদে এদেশের কিছু খুনিদের ভাড়া করে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের উপর।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় কনফেডারেশন তৈরি করার জন্য যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল সেই ষড়যন্ত্রের জাল আস্তে আস্তে করে বিস্তার করে এই অঘটন ঘটিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। নানক বলেন, এটি সেনা বিদ্রোহ ছিল না। আর সেনা বিদ্রোহ ছিল না বলেই এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডে কে অংশ গ্রহণ করেছে? তারা কোথায় ছিল? ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পরে কে তাদেরকে নিরাপদে বিশেষ বিমানযোগে ব্যাংককে পৌঁছে দিয়েছে? সেই হল জেনারেল জিয়াউর রহমান। জেনারেল জিয়া শুধু তাদেরকে ব্যাংককে পৌঁছে দিল না তাদেরকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিয়োগ দিয়েছিল। কাজেই জেনারেল জিয়া যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এটি দিবালোকের মতো সত্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির পিতার হত্যার খুনিদের বিচার হয়েছে উল্লেখ করে নানক বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদেরকে আমরা চিনতে পেরেছি। কিন্তু তাদের পিছনে যারা কলকাঠি নাড়িয়েছে তাদেরকে আমরা চিনতে পারি নাই। নেত্রী আপনার প্রতি আর্জি, সেই হত্যার কলকাঠি যারা নেড়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন। আর তাদের মুখোশ উন্মোচন করলে ওই এক/এগারোর সময় আওয়ামী লীগের যে নেতারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাদেরও মুখোশ উন্মোচন করা যাবে। তাহলেই একটি সুস্থ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকবে, মানুষ আর কোনদিন বিভ্রান্ত হবে না।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার হয়েছে, যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদেরও বিচার করতে হবে। সেদন খন্দকার মোশতাকের সাথে যারা হাত মিলিয়েছিল, তারাও হত্যার সহযোগী। ১/১১ এর সময়ও একটি অপশক্তি সক্রিয় ছিল। আমরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, হত্যার রাজনীতির চির অবসান চাই। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার পাশে সবসময় থাকতে হবে যাতে মোশতাকের মত কেউ অপচেষ্টায় লিপ্ত হতে না পারে। বাংলাদেশে আর কোন ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কেআইবি’র সভাপতি ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. শাহীদুর রশীদ ভুঁইয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এক এক এম সাইদুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনসহ অনেকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর