সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেলে মঙ্গল হবে না, ফখরুলকে নানক

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 04:58:01

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকেন, তার পাশে গিয়ে মাতম করেন। চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে মাতম করেন। আমাদের সহ্যের বাঁধ যদি ভেঙে যায় তাহলে আপনাদেও জন্য মঙ্গল হবে না।

রোববার (২২ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন। একুশে আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হত্যার উদ্দেশ্যে বর্বর গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে সেই সময় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশ অচল করে দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নানক এবিষয়ে বলেন, তোমরা এখন চলে যাও, হাসপাতালে হাসপাতলে আমাদের দুই বোনের গয়না-গাটি যা আছে সব বিক্রি করে হলেও আমার নেতাকর্মীদের চিকিৎসা করাও। তাদের চিকিৎসা করতে হবে। তাদের বাঁচাতে হবে। এই তো জনতার নেত্রী শেখ হাসিনা। এই তো কর্মীদের নেত্রী শেখ হাসিনা।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, আমি তখন যুবলীগের চেয়ারম্যান। ঘটনার দিন সকাল থেকেই আমরা ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ছিলাম। আওয়ামী লীগের সমাবেশ থাকলে সবসময় পুলিশের আনাগোনা থাকত। কিন্তু ২১ আগস্ট সমাবেশস্থলে কোনো পুলিশ দেখিনি। কি রকম যেন একটা গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সন্দেহ আরো গভীর হয় ও উদ্বেগ বাড়ে। খবর পেলাম নেত্রী রওনা দিচ্ছেন। আমরা নেত্রীকে রিসিভ করার জন্য যুবলীগের প্রায় দুই হাজার নেতা-কর্মী ওসমানী মিলনায়তনের সামনে গেলাম। এলাকা লোকারণ্য হয়ে গেল, নেত্রীর গাড়ি খুব কষ্ট করেই ভেতরে নিয়ে গেলাম। আমরা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি আর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুনছি। বিকেল ৫টা ১৩ মিনিটে নেত্রীর বক্তৃতা শেষ পর্যায়ে। আমরা মিছিল করব, প্রস্তুতি নিচ্ছি। হঠাৎ মঞ্চ শুরু হল একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ। মুহুর্মুহু শব্দে সবকিছু তছনছ হয়ে গেল। খবর পেলাম নেত্রী বেরিয়ে গেছেন। সুধাসদনের দিকে গেছেন। আমরা দ্রুত সুধাসদন ছুটলাম নেত্রীর কাছে।

সে মুহূর্তের অবস্থা তুলে ধরে নানক আরও বলেন, সারাদেশের নেতাকর্মীরা টেলিফোন করে জানতে চাচ্ছেন, তারা কী করবেন! সুধাসদনে ঢুকে দেখি নেত্রী সোফায় বসা আর সোফার হাতলে বসে নেত্রীর গলা জড়িয়ে ধরে কান্না করছেন ছোট আপা (শেখ রেহানা)। তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে। আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন- ‘বাইচা আছো।’ এরই মধ্যে নেত্রীর নিরাপত্তায় পুরো সুধাসদন কর্ডন করে রেখেছে আমাদের নেতাকর্মীরা। আমি আপাকে বললাম ওদের (বিএনপি-জামায়াত) আর ছাড়ব না। ক্ষমতায় থাকতে দেব না। অনির্দিষ্টকালের হরতাল দিয়ে সব কলাপস করে দিব। রক্তের বদলা নেবই। ওদের পতন না ঘটা পর্যন্ত হরতাল চলবে। যেখানে যার বাড়িঘর আছে, সমস্ত জ্বালিয়ে দেব। নেত্রী তখন বললেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের জন্য। আগে আমার মানুষকে বাঁচাও। হরতাল হলে তারা মুভমেন্ট করতে পারবে না। রাজনীতি পরে। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন ‘আমার জন্য আর কত মানুষ জীবন দিবে? ওদের বাঁচাও। আমার আর রেহানার সমস্ত গহনা বিক্রি করে হলেও ওদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করো।’ 

নেত্রীর নির্দেশে আমাদের চিকিৎসকদের নিয়ে তিনটি চিকিৎসক টিম করে হাসপাতালে নামিয়ে দিতে বললেন। কারণ ড্যাবের ডাক্তাররা সরে গেছে, আহতদের কোনো চিকিৎসা তারা দেবেন না। আমরা আমাদের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা সবাই যার যার জায়গা থেকে আহতদের চিকিৎসায় নেমে পড়লেন। 

তিনি জানান, সেদিন রাতে আবার সুধাসদনে গেলাম। তখন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। নেত্রী বললেন- ‘কালকে তোমরা দুইজনে মায়াকে নিয়ে ওই এলাকাটা (সমাবেশস্থল) একটু সংরক্ষণ করো’। পরের দিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে সমাবেশস্থলে গিয়ে দেখলাম, সেখানে পুলিশ রয়েছে। তারা আমাদেরকে আমাদের দলীয় অফিসে ঢুকতে দেবে না। আমরা চিৎকার করে বলতে লাগলাম- ‘মরাকে আর মারার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। গুলি করেন বুকে। তারপরও ঢুকবো।’

এক সময় ওয়াকিটকিতে কার সঙ্গে যেন কথা বলল পুলিশ। আমরা ধাক্কা দেয়ার পর তারা সরে গেল। আমরা যখন ঢুকলাম, তখনও রক্ত শুকায় নাই। ছুপ ছুপ রক্ত পড়ে আছে। যুবলীগ অফিসে ঢুকে দেখি আঙুল পরে আছে। পা ফেলতে পারছি না। হাতের আঙুল, নখ, কাঁচা গোশত, হাজার হাজার জুতা পড়ে আছে। লাল ব্যানার ছিঁড়ে লাঠিতে বেঁধে ট্রাকসহ পুরো এলাকা আমরা ঘিরে রাখলাম। গ্রেনেডের চিহ্নিত জায়গাগুলোয় লাল পতাকা টানিয়ে দিলাম।  ওইদিন রাতেই (২২ আগস্ট) সিটি করপোরেশনের গাড়ি সব আলামত ধুয়ে ফেলল। ট্রাকটা নিয়ে গেছে। কোনো আলামত তারা রাখেনি। সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে রেখেছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেন, ফখরুল সাহেব লম্বা লম্বা কথা বলেন। আমাদের পায়ের তলায় নাকি মাটি নেই। মিছিল করে, মিটিং করেন, গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকেন, তার পাশে গিয়ে মাতম করেন। চন্দ্রিমা উদ্যানে গিয়ে মাতম করেন। আমাদের সহ্যের বাঁধ যদি ভেঙে যায় তাহলে আপনাদের জন্য মঙ্গল হবে না।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে সেদিন সারা ঢাকা শহর যেহেতু কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে নাই। যেহেতু যুবলীগ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে নাই। এই কারণে ১০৯টি ঢাকা মহানগর কমিটি ভেঙে দিলাম, বাতিল করে দিলাম ব্যর্থতার জন্য এবং ১১ দিনের মাথায় ১০৯টি কমিটি গঠন করেছি সেই কমিটি এখনো কাজ করছে।

এবিষয়ে তিনি বলেন, এই ছাত্রলীগ হল বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ক্যান্টনমেন্ট। শেখ হাসিনা গ্রেফতার পরে এই ছাত্রলীগ, যুবলীগই এক/এগারের সময় গ্রেফতারের পর প্রতিবাদ করেছে সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, প্রতিরোধ করেছে। কাজেই ছাত্রলীগ আমাদের আস্থার ঠিকানা, নির্ভরযোগ্য জায়গা। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এইভাবে চলতে পারে না। এইভাবে চলবে না। সংগঠন দাঁড় করাতে হবে। যাদের সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে, তাদের সময় দিয়ে দিতে হবে। এতো তারিখের মধ্যে কমিটি গঠন করবেন নতুবা সেই কমিটি সেই তারিখে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, বাতিল হয়ে যাবে। সেই জায়গায় সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি করে সম্মেলন করে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। ঢাকা থেকে ঘোষণা দিয়েন না। এই কমিটি দিয়ে কোন কাজ হবে না।

সাংগঠনিক শক্তিই হল আমাদের একমাত্র শক্তি মনে রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল এই দেশটিকে ওই খালেদা-নিজামী তারেক রহমানরা তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। মির্জা ফখরুল সাহেব করতে পারেন নাই। আপনি বলেন, আমাদের পায়ের তলায় মাটি নাই? আমরা হাঁটি কেমনে? কিসের ওপর ভর দিয়া হাঁটি? আপনাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব নাই। আর সেই রাজনৈকিত অস্তিত্ব নেই বলে আজকে ১২/১৩বছর যাবৎ জনগণ আপনাদের বুড়ো আঙুল দেখিয়েছি। জনগণ আপনাদের অবরোধ-হরতাল, অসহযোগ, জ্বালাও-পোড়াও সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে থুথু দিয়েছে আপনাদের কাপড়ের ওপর, সেই থুথু দিয়ে বলে দিয়েছে, খুনের রাজাদের জায়গা এই বাংলাদেশে নাই। 

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হামলার তদন্তকারী কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও মামলার অন্যতম সাক্ষী মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরী (অব.), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ অনেকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর