সাহস থাকলে দেশে আস তারেককে বললেন নানক

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 18:08:25

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাথে তারেক রহমান জড়িত বলেই দেশের বাইরে পালিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জড়িতই যদি না থাকে, তাহলে আপনাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশ থেকে পালিয়ে দেশের বাইরে গেছেন কেন? পালিয়ে রয়েছেন কেন?  আসুক না, এসে আইন মোকাবিলা করেন। সাহস থাকলে এসে প্রমাণ করেন যে ২১শে আগস্ট হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বেগম নুরজাহান স্কুল মাঠে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আদাবর থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আদাবর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সংসদ সদস্য সাদেক খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচিসহ মহানগর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্যদের আগমনে মোহম্মাদপুর আদাবরসহ বিভিন্ন এলাকায় নেতাকর্মীদের বিশাল জমায়েত হয়। ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি ছোটখাটো জনসভার রূপ ধারণ করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সেদিন কারা হামলা চালিয়েছিল? মির্জা ফকরুল সাহেব জবাব দেন। সে জবাব দিতে হবে আপনাদের জাতির কাছে। গ্রেনেড হামলা হয়েছে তারপর গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসায় বাঁধা দিয়েছেন আপনারা, গ্রেনেড হামলায় যারা নিহত হয়েছে তাদের লাশ গুম করতে চেয়েছিলেন আপনারা। আর গ্রেনেড হামলার পর সংসদ অধিবেশনে আপনাদের চেয়ারপারসন  বক্তৃতা করলেন, বললেন শেখ হাসিনা নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে বোমা নিয়ে গেছেন এর চেয়ে লজ্জার আর কি আছে? আজ সবকিছু খোলাসা হয়ে গেছে, পরিষ্কার হয়ে গেছে মানুষের কাছে কিভাবে হত্যার নীলনকশা হয়েছিল। কারা কারা জড়িত ছিল।

তারেক রহমানের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সাহস থাকে তো আস না? আর সে সময় খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী কেন পলাতক? একমাত্র কারণ হলো যে গ্রেনেড হামলায় জড়িত ছিল। তারা নীলনকশা করেছে আজ সব বেরিয়ে এসেছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সাথে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যা করেছে তাদের বিচার হয়েছে, কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পিছনে যারা কলকাটি নেড়েছে তাদের মুখোশ এখনো উন্মোচিত হয়নি। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতেই হবে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালে ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে কারা অভ্যন্তরের ভেতর নির্মম ভাবে হত্যা করে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। সেদিন হত্যাকারীদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ কে করে দিয়েছিল? কে হত্যাকরীদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল? এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত। এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে তার মরণোত্তর বিচার হতেই হবে। মরণোত্তর বিচার করতেই হবে, এর দাবি আমরা জানাচ্ছি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানক বলেন, সেদিন কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল? মোস্তাক-জিয়া ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন তৈরি করতে চেয়েছিল, পাকিস্তানকে ফিরিয়ে আনার জন্য। আর সেজন্য একটি নির্বাচিত সরকারকে জোর করে বন্দুকের বেয়োনেটের মাথায় ক্ষমতাচ্যুত করা হলো।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সেদিন প্রতিবাদ প্রতিরোধ না হওয়ার পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর তখন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ২৪ জন মন্ত্রী সেদিন মোস্তাকের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। আমরা যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে গ্রামগঞ্জে ঘুরে বেড়াচ্ছি, মাথায় হুলিয়া নিয়ে ঘুরছি সেই মুহূর্তে কারা মোস্তাকের সাথে আঁতাত করেছিল? সেদিন কেন প্রতিবাদ হয় নাই, প্রতিরোধ হয় নাই, এটাও খুঁজে বের করতে হবে।

করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের সমালোচনার জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ এখনও ভ্যাকসিন পায় নাই। কিন্তু আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা অগ্রিম টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাকসিন সংকটের কারণে ভ্যাকসিন আসছে, আসবে, আসতেই থাকবে। আপনাদের কুতুকুতু দেওয়ার কোন কারণ নেই। আপনার নেতা ও আপনারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে এদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, মির্জা ফকরুল সাহেব আপনারা ভুল পথে হাঁটছেন। ভুল পথে হাটার কারণে আপনারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। জনগণ আপনাদের মুখে থুথু মেরেছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর জেনারেল জিয়া আর জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্র দখল করেছিল। আর শেখ হাসিনা বাংলাদেশের ফিরে এসে তিনি বলেছিলেন আমি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেব, আমি পিতা হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। তার সেই আহ্বানে তখন জাতীয় জাগ্রন সৃষ্টি হল, তখন আবার নতুন করে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হলো। ওই হাওয়া ভবনের তারেক রহমান, হাওয়া ভবনে বসে সে সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর আর খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য পিন্টু সাহেবরা সিদ্ধান্ত নিলো শেখ হাসিনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আর সেই পরিকল্পনায় গ্রেনেড হামলা।

তিনি বলেন, সেই কারণে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমার নেত্রীকে হত্যার চেষ্টা করল। নিহত হলেন ২৪ জন। তারেক রহমান এই হত্যাকাণ্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। আর জড়িত বলেই দেশের বাইরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানান তিনি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের জবাবে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যায় না। জননেত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের এই মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারেন না। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমাদের যখন করোনা নিয়ন্ত্রণে আসবে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হবে।

মির্জা আজম বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত। তাই জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার করতেই হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর