ঐক্যফ্রন্টের মুখে হাসি নেই

বিবিধ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 01:34:42

নানা জল্পনা-কল্পনা ও নাটকীয়তা শেষে ৭ দফা দাবি ও ১১টা লক্ষ্য নিয়ে নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানে আত্নপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। প্রবীণ আইনজীবী ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করলে সেভাবে যাত্রা শুরু করতে পারেনি। উল্টো ফ্রন্ট নেতারা নানা বিতর্কিত বক্তব্য ও মামলা-মোকদ্দামায় জেরবার।

এরই মাঝে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বুধবার (২৪ অক্টোবর) সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠে দুপুর ২টায় সমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সিলেটের সমাবেশকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেখানকার রাজনীতি। সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতা বাধার মুখে পড়ছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশও বেশ কঠোর অবস্থানে।

জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে গত ১৩ অক্টোবর ঐক্যফ্রন্ট আত্নপ্রকাশ করে। এর চারদিন আগে ৯ অক্টোবর বেসরকারি এক টেলিভিশন চ্যানেলে সেনাবাহিনী প্রধানকে নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তার মন্তব্যের পর বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সেনাসদর থেকে ১০ অক্টোবর এক বিবৃতিতে জাফরুল্লাহর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে সেনাবাহিনীর প্রধান সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্য ‘অসৎ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত’উল্লেখ করে শুক্রবার (১২ অক্টোবর) রাতে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি করেন সেনা সদরে দায়িত্বরত মেজর এম রকিবুল আলম। চাপের মুখে ১৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে সেনাপ্রধানের কাছে দু:খ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু সেদিনও নিজের বক্তব্যের সংশোধন এনে আবারো সেনাপ্রধান সম্পর্কে ভুল তথ্য দেন তিনি। যাতে আবারো তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর ১৫ অক্টোবর আবারো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আইএসপিআর থেকে প্রতিবাদ দেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই ক্যান্টনমেন্ট থানায় একজন সেনা কর্মকর্তার করা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তভার গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। পরদিন ১৬ অক্টোবর ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মামলা করেন জনৈক মোহাম্মদ আলী। ২০ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন হাসান ইমাম।

সমালোচনা ও মামলায় জাফরুল্লাহ চুপসে যান। কিন্তু তাতের শিক্ষা নেননি ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বরং নতুন বির্তকের সৃষ্টি করেন ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।

১৬ অক্টোবর মধ্যরাতে বেসরকারি এক টেলিভিশনের টক শোতে লাইভে যুক্ত ছিলেন মইনুল হোসেন। এ সময় টকশোতে উপস্থিত সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন তাকে প্রশ্ন করেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আলোচনা চলছে, আপনি সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব করছেন কি না?’ মইনুল হোসেন এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার এক পর্যায়ে মাসুদা ভাট্টিকে ‘চরিত্রহীন’বলে মন্তব্য করেন। লাইভ টকশোতে তার এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরদিন ১৭ অক্টোবর মইনুল হোসেন মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে মন্তব্যের জন্য দু:খ প্রকাশ করেন ও টকশোর উপস্থাপকের কাছেও একটা চিঠি লেখেন। তারপর মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্য ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেয় বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হতে থাকে। ২১ অক্টোবর ঢাকায় মাসুদা ভাট্টি নিজে মানহানির একটি মামলা করেন। একই দিন জামালপুর, কুমিল্লা ও কুড়িগ্রামে আরও তিনটি মানহানির মামলা হয়। এ ছাড়া সোমবার (২২ অক্টোবর) ভোলা, রংপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনটি মামলা হয়। অন্য মামলাগুলোতে আগাম জামিন নিলেও রংপুরের মামলায় ওইদিন রাতেই ঐক্যফ্রন্ট নেতা ও রাজধানীর উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসা থেকে মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ওইদিন বিকেলে মইনুল হোসেনকে তিরস্কার করে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে নারী সমাজকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রেপ্তার হওয়া মইনুল এখন কারাগারে আছেন।

একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে দেশব্যাপী সমালোচনা ও মামলা-মোকদ্দমায় ঐক্যফ্রন্টের দুই শীর্ষ নেতা জড়িত হওয়ায় এখন মুখে হাসি নেই নেতাদের মুখে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মইনুল হোসেনের মত ‘ক্ষমতাশালী’ব্যক্তি কারাগারে যাওয়ায় উল্টো দুশ্চিন্তা ভর করেছে কর্মীদের মধ্যে। সেই সঙ্গে ‘বিএনপি থেকে তারেক রহমানের নেতৃত্ব সরিয়ে দেওয়ার জন্য ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আসা হয়েছে’ব্যারিস্টার মইনুলের এমন মন্তব্যের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ায় বিএনপিতে দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। এসব কারণে উদ্বিগ্ন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বিষয়টি নিয়ে এক বিবৃতিতে ঐক্যফোরামের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। যা প্রধানমন্ত্রীর চিন্তার অনুকূল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে আমরা উদ্বিগ্ন। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি ও গ্রেপ্তার অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর