বিবাদ মিটিয়ে দ্বাদশ নির্বাচনের জন্য সাংগঠনিক গতি বাড়ানোর নির্দেশ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-26 00:59:35

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলীয় নেতাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব বিবাদ মিটিয়ে সংগঠনকে কিভাবে শক্তিশালী করা যায় সেদিকে সাংগঠনিক নেতাদের কাজ করার নির্দেশ দেন সভাপতি। পাশাপাশি যে সকল স্থানীয় সরকারের পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হবে সেখানে দলীয় প্রার্থীর বাইরে যারা বিদ্রোহ করবে বা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করবে তাদের তাৎক্ষণিক শাস্তি নিশ্চিত করতে বলেছেন।

বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাইরেও যেসব এলাকা বা জেলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা রয়েছে তাদের সাথেও পরামর্শ করে ওই এলাকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করাসহ দ্বন্দ্ব নিরসনের নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সকালে গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। সকাল সাড়ে দশটায় বৈঠক শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ১১টায় বৈঠক শুরু হয়। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক বিকেল সাড়ে তিনটায় শেষ হয়। বৈঠকটি প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠিত হয়। গত ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সীমিত পরিসরে সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় ৫৩ জন নেতা বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু দুজন আমন্ত্রিত নেতারা দেশের বাইরে অবস্থান করার কারণে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের গণভবনের বাইরে গেটের সামনে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

করোনার ধাক্কা সামলিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছর জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণী বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি। বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে অবস্থান করায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজ নিজ বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করার সময় নির্দিষ্ট করে কোন জেলায়, কোন উপজেলায় কার সাথে কার কার দ্বন্দ্ব-কলহ, গ্রুপিং রয়েছে, কোথায় কোন এমপিরা মাইম্যানদের সংগঠনের নেতা বানানোর ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে, কারা কোথায় নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছে আকারে-ইঙ্গিতে তুলে ধরেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক নেতাদের বক্তব্য শুনে কিছু কিছু জেলা-উপজেলার নির্দিষ্ট সমস্যাগুলোরও সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেন কিভাবে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলা যায়। বৈঠকে সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি।

বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমাদের যারা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আছে, আপনারা নিজেদের দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে আমাদের যারা ওই এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা আছেন সেসব এলাকা বা জেলার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের সাথেও পরামর্শ করে সমন্বয় করবেন। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বাইরেও যারা কেন্দ্রীয় নেতা আছেন, তাদের সাথেও সংগঠনের স্বার্থে পরামর্শ করে সমন্বয় করতে হবে। তাদের নিজ এলাকায় তাদের বাদ দিয়ে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন জোরদার হবে না। এসব বিষয়েও আমাদের সমন্বয় রাখতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে।

এসময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দ্বন্দ্ব গ্রুপিং নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, মাদারীপুরে আমাদের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান আছে। তিনি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতা। সেই হিসেবে তিনি ওই এলাকার মুরুব্বি। তার সাথেও পরামর্শ করে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সংগঠনকে গতিশীল করতে হবে। দ্বন্দ্ব নিরসনে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব রাখলে হবে না।

এছাড়াও দলীয় সভাপতি সারাদেশে জেলা উপজেলা পৌরসভার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার নির্দেশনা দেন এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করার বিভিন্ন গাইডলাইন দেন।

বৈঠক শেষে গণভবনের গেটের বাইরে সাংবাদিকদের সামনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের বিভিন্ন উপ কমিটিগুলো যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য অনলাইন প্লাটফর্মে সেমিনারের মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হবে সেগুলো আপডেট করার জন্য উপ কমিটিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কয়েকজন উপ কমিটির সদস্যদের বক্তব্য নেত্রী শুনেছেন।

তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের ৮ বিভাগের ৮ জন সাংগঠনিকের কথা শুনেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে থাকায় সেখানে আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ছিলেন তিনি বক্তব্য রেখেছেন। আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজেরা লিখিত রিপোর্ট করেছেন সভানেত্রীর কাছে। যেখানে যেখানে বিবাদ আছে যেখানে সমাধান করা দরকার দ্রুত কলহ বিবাদ মিমাংসা করা জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর