দেশের রাজনীতিতে ‘সংলাপের’ স্বস্তি

বিবিধ, রাজনীতি

সাব্বির আহমেদ, সি‌নিয়র ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট | 2023-08-26 08:40:35

মেঘলা আকাশ, দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সবকিছু মিলে কেমন যেন মন খারাপ করা আবহাওয়া। তার উপর পরিবহন ধর্মঘটের ভোগান্তি। তবে দিন শেষে দে‌শের রাজনী‌তি‌তে সারপ্রাইজ বা 'সুবাতাস' বয়ে যাওয়ার এক সংবাদ আসে- ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসবে আওয়ামী লীগ’। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের রাজনীতির পাল্টা-পাল্টি খেলায় -খবরটি জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না। কারণ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ হয়েছে; এমন দৃশ্য মনে করতে হলে একটু কষ্টই করতে হবে মানুষকে।

একদল আরেকদলকে যখন নানাভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছে – ঠিক তখনই দেশের প্রধান দলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠক বা সংলাপের খবরে দেশের রাজনীতিতে স্বস্তি আভাস দিচ্ছে। সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে চলছে কানাঘুষা। কেউ কেউ সরকারি দল আওয়ামী লীগের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। অপরদিকে কেমন সংলাপ হবে তা নিয়ে চলছে চুল-ছেড়া বিশ্লেষণও।

সুশীল সমাজ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,  এটা রাজনীতির একটি ভালো দিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন সংস্কৃতি প্রায় উঠেই যেতে বসেছিল। দেশের স্বার্থে এ ধরনের সংলাপ প্রয়োজন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রধান বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি নিজেই সংলাপে প্রতিনিধিত্ব করবেন। আর তার সঙ্গে বসবেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর চিঠি প্রদান করেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড.কামাল হোসেন। তার এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আজ সোমবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার বিষয়টি জানান।  

ঐক্যফ্রন্টের ‌আহ্বানে সাড়া দিয়ে পূর্বশর্ত ছাড়াই আওয়ামী লীগের সংলা‌পে বসার এ খব‌রে দে‌শের সাধারণ মানুষ বেশ ইতিবাচকভা‌বে নি‌য়ে‌ছেন।

এ বিষয়ে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে এমন বেশ অবাক হয়েছি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগেও তো  বলছিলেন খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ। এটা ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ।  জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবিগুলো আওয়ামী লীগ কতটা মানবে -সেটা এখন প্রশ্ন। নির্বাচন ভালো হওয়ার জন্য সংলাপ করতে হবে এবং নির্বাচনে পরে জনগণের অধিকার নিয়ে তারা কি করবেন এগুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আসার দরকার।

এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে জানিয়ে সরকারকে ধন্যবাদ জানান জাতীয ঐক্যফ্রন্ট নেতা ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, এর মাধ্যমে জনগণের মনোভাবের প্রাথমিক বিজয় বলে উল্লেখ করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকও হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন,  আমার কাছে মনে হয় এটা খুব ভালো হলো। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান তিনি।  

সদ্য বিকল্পধারায় যোগ দেওয়া ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মুবীন চৌধুরী বলেন, সংলাপ হওয়াটা অত্যন্ত ভালো দিক। দ্বিমত থাকা স্বত্বেও সংলাপের পথটা বর্জন করা ঠিক হবে না। সাধারণ নাগরিক হিসেবেও আমি এ খবরে আনন্দিত। এই জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাব ইতিবাচক। ফলাফল কি হবে তা সংলাপের পরে বলা যাবে। মানুষ একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে যে সংলাপ হবে। আর রাজনীতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি।

এদিকে সামাজিক যোগমাধ্যমে সংলাপের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন নান শ্রেণি পেশার মানুষ।

অর্থকথার সম্পাদক সৈয়দ রানা মোস্তাফী ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন,  জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসার খবরটিতে রাজনীতি নাটকীয় মোড় নিতে পারে।

এজাজ আহমেদ নামে একজন লিখেছেন, ফেসবুকে রাজনীতির সর্বশেষ হালচাল দেখে বুঝা যায় যে, আগামী নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হবে। এখন সংলাপটা যেন অর্থবহ হয় ।

পিয়াস হাসান নামে অপর একজন লিখেছেন, সংলাপটা খোলাখুলি হওয়া চাই, ভেতরে ভেতরে হলে জাতীয় সমস্যার সমাধান হবে না, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করবে ।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিকে সংলাপে বসার আহ্বান জানালেও সে সময় দলটি সম্মত হয়নি। এরপর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর বিএনপি বহুবার সংলাপের আহ্বান জানালেও সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। বহু প্রতীক্ষার পর সম্প্রতি গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে আওয়ামী লীগ সাড়া দিলে হতে যাচ্ছে কাঙ্খিত এ সংলাপ। আপাতত সংলাপের খবরে স্বস্তি দিলেও নির্বাচনের আগে দেশের রাজনীতিতে  এ বৈঠক কতটা সুফল বয়ে আনবে তা সময়েই বলে দিবে- বলে মনে করেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর