ওবায়দুল কাদেরের জেলায় বিতর্কিতরা নৌকা পাওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভ

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী | 2023-08-23 14:54:17

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে একাধিক বিতর্কিত ব্যক্তি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভ জানিয়ে এসব প্রার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জনবিচ্ছিন্ন নেতা, বিএনপি নেতা ও বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িতদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী ১১ নভেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত বুধবার আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি মাধ্যমে বেগমগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

বেগমগঞ্জে ১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত ৪ টি ইউনিয়নে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নৌকার মনোনয়ন দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে, ১০ নং নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ বাচ্চু, ৭ নং একলাশপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পাওয়া আলমগীর কবির আলো, ১৩ নং রসুলপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন সেলিম, ১১ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবেদ সাইফুল কালাম মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

১০ নং নরোত্তমপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ বাচ্চু বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রতিকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি নাশকতা ও গাড়ি পোড়ানোর মামলার আসামি। তার নেতৃত্বে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এতো কিছুর পরও সম্প্রতি হারুন উর রশিদ বাচ্চুকে আহবায়ক করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে দলে কোন্দল দেখা দেয়। তৃণমূলের প্রবল বিরোধিতার মুখেও হারুন উর রশিদ বাচ্চু আবারও নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় সর্বত্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

একই ভাবে ৭নং একলাশপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিক পাওয়া আলমগীর কবির আলো বিতর্কিত ব্যক্তি। গত বছর একলাশপুরে গৃহবধু নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত দেলোয়ারের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা এবং মামুনুর রশিদ কিরণ এমপির কাছে দেলোয়ারকে তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর তিনি দীর্ঘদিন এলাকা ছাড়া ছিলেন।

অপরদিকে, ১৩ নং রসুলপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন সেলিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপ, জুয়া খেলা, মাদ খেয়ে মাতলামি, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে জুয়া খেলা অবস্থায় চেয়ারম্যান নুরুল হোসেন সেলিমকে নোয়াখালী ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে ডিবির এস,আই ওমর ফারুক বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলা সেলিম চেয়ারম্যান প্রায় ১ মাস কারাগারে ছিলেন।

দূর্গাপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবেদ সাইফুল কালামও আওয়ামী লীগে একজন হাইব্রিড নেতা বলে দাবি করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদে থাকলেও দলীয় কর্মকাণ্ডে ছিলেন নিস্ক্রিয়। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সম্প্রতি আবেদ সাইফুল কালামকে আহবায়ক করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পর দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করে। আবারও তিনি দলের মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

নরোত্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.সেলিম ও সহ সভাপতি মিজানুর রহমান খোকন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, যেখানে আমাদের ত্যাগী অনেক নেতা প্রার্থী ছিলো, সেখানে বিএনপি থেকে আসা বিতর্কিত একজন ব্যক্তি কি ভাবে নৌকার সমর্থন পাওয়া তা আমাদের বুঝে আসেন। আমরা ঘৃণা ভরে তাকে প্রত্যাক্ষাণ করছি। আমরা মনে করি আমাদের নেত্রীকে নেতারা সঠিক তথ্য দেননি। তাই বিতর্কিত ব্যক্তিরা দলের মনোনয়ন পেয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

এ বিষয়ে মতামত জানতে ৪জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা তাৎক্ষণিক কেউই ফোন রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৪ মিনিটে ও ৮ মিনিটে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ ও সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলে তারা কল রিসিভ করেন নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর