যে ৫১ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত

বিবিধ, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:29:42

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীকে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির মাঠে অনেকটাই নিরব দেখা গেছে। বিশেষ করে বৃহত্তর ‘ঐক্যের প্রশ্নে’ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর দৃঢ় অবস্থানে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে দলটি।

রাজনৈতিক অঙ্গণে গুঞ্জণ আছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ও সংলাপ এসবকিছুই জামায়াতের প্রেসক্রিপশন। ব্যাকস্টেজ থেকে ফুয়েল যোগান দিচ্ছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী এই দলটি।

জামায়াতের একটি সূত্র বলছে, জামায়াতে ইসলামী একদিকে নিরবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গতিবিধি ঠিক রাখছে অপরদিকে নিজেদের প্রস্তুত করছে নির্বাচনের জন্য। যাতে করে মাঝপথে হোচট খেতে না হয়। নির্বাচন ও আন্দোলন এ দুটির কথা মাথায় রেখেই সার্বিক পরিস্থিতি পর‌্যবেক্ষণ করছে দলটি।

সম্প্রতি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ সদস্যের চুড়ান্ত প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। যা জামায়াতের একটি সূত্র বার্তা২৪.কমকে নিশ্চিত করেছে। আরও জানায়, জামায়াত যে তালিকা দিয়েছে এর বাইরেও ৫০ টিরও অধিক আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে ৫১ আসন যদি ২০ দলীয় জোট না ছাড়ে সেক্ষেত্রে সতন্ত্র পার্থীতা দেবে দলটি।

এ বিষয়ে জামায়াতের একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।বিএনপির একাধিক নেতাও এনিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে জানা যায়, যে সব আসনে জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এর অধিকাংশ আসনেই জামায়াতের ঘাঁটি বলে পরিচিত। বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যে সহিংসতা হয়েছিলো এই আসনগুলো তার নেতৃত্ব দিয়েছে।

নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোর, পিরোজপুরের যেসব আসনে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী দেবে বলে চূড়ান্ত করেছে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে জামায়তের নির্বাচনী বেল্ট বলে পরিচিত ছিলো। এসব স্থানে ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আর এসব স্থানে জালাও-পোড়াও- এর নেতৃত্ব দিয়েছে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীরা বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।   

যে ৫১ আসনে জামায়াত প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে সেগুলো হলো-

ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর): মাওলানা আবদুল হাকিম; দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল): মাওলানা আবু হানিফ; দিনাজপুর-৪ (খানসামা-চিরিরবন্দর): মাও আফতাব উদ্দিন মোল্লা; দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ-বিরামপুর-হাকিমপুর-ঘোড়াঘাট): আনোয়ারুল ইসলাম; নীলফামারী-২ (সদর) মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু।

নীলফামারী-৩ (জলঢাকা): মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম; লালমনিরহাট-১ (পাটগ্রাম-হাতিবান্ধা): আবু হেনা মো. এরশাদ হোসেন সাজু; রংপুর-৫ (মিঠপুকুর): অধ্যাপক গোলাম রব্বানী; গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ): অধ্যাপক মাজেদুর রহমান; গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী): মাওলানা নজরুল ইসলাম; গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্ধগঞ্জ): ডা. আবদুর রহীম; জয়পুরহাট-১ (সদর-পাঁচবিবি): ডা. ফজলুর রহমান সাঈদ; বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ): অধ্যক্ষ শাহাদাতুজ্জামান; বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম): অধ্যক্ষ মাও. তায়েব আলী; চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) ড. কেরামত আলী; চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর): নুরুল ইসলাম বুলবুল; রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী -তানোর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান; নওগাঁ-৪ (মান্দা): খ ম আবদুর রাকিব।

সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলঙ্গা): মাও রফিকুল ইসলাম খান; সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালি): অধ্যক্ষ আলী আলম; পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া): ব্যারিষ্টার নাজিব মোমেন; পাবনা-৫ (সদর): প্রিন্সিপাল ইকবাল হোসাইন; কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) মুহাম্মদ আবদুল গফুর; চুয়াডাঙ্গা-২ (দামুড়হুদা-জীবন নগর): মোহাম্মদ রুহুল আমিন; ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর): অধ্যাপক মতিয়ার রহমান; যশোর-১ (শার্শা): মাওলানা আজিজুর রহমান; যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা): আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদত হোসাইন; যশোর-৬ (কেশবপুর)- অধ্যাপক মুক্তার আলী; বাগেরহাট-৩ (মংলা-রামপাল): অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ; বাগেরহাট-৪ (মোড়েলগঞ্জ-সরনখোলা): অধ্যাপক আবদুল আলীম; খুলনা-৫ (ফুলতলা-ডুমুরিয়া): অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার; খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা): মাও আবুল কালাম আযাদ; সাতক্ষীরা-১ (কলারোয়া-তালা): অধ্যক্ষ ইজ্জতুল্লাহ; সাতক্ষীরা-২ (সদর): মুহাদ্দিস আবদুল খালেক; সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা): মুফতি রবিউল বাশার; সাতক্ষীরা-৪ (কালিগঞ্জ-শ্যামনগর): গাজী নজরুল ইসলাম।

এছাড়া পিরোজপুর-১ (সদর -নাজিরপুর-স্বরূপকাঠি): শামীম সাঈদী; পটুয়াখালী-২ (বাউফল): ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ; শেরপুর-১ (সদর): হাসান ইমাম ওয়াফি; ময়মনসিংহ-৬ (ফুলবাড়িয়া): অধ্যাপক জসিম উদ্দিন; ঢাকা-১৫ (কাফরুল-মিরপুর): ডাঃ শফিকুর রহমান; সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট): মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী; সিলেট-৬ (বিয়ানিবাজার-গোলাপগঞ্জ): মাওলানা হাবিবুর রহমান; কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট-সদর দক্ষিণ-লালমাই): মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত; কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম): ডা.সৈয়দ আবদুল্লাহ মো.তাহের; ফেনী-৩ (সোনাগাজী-দাগনভুঞা): ডা.ফখরুদ্দিন মানিক; লক্ষীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক): মাস্টার রুহুল আমীন; চট্টগ্রাম-১০ (ডাবলমুরিং): আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী; চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া): মাওলানা শামসুল ইসলাম; চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী): মাওলানা জহিরুল ইসলাম; কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী): হামিদুর রহমান আজাদ।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ৩৫টি আসন দেয় এবং বিএনপি জামায়াতের যৌথ প্রার্থী(উন্মুক্ত আসন) ছিল ৪ টি। সব মিলিয়ে ৩৯ আসনে লড়াই করে জামায়াত। এসব আসন থেকে যোগ বিয়োগ করে ৫১ আসনকে টার্গেটে নিয়েছে দলটি। তারা মনে করে সবগুলো আসনে তারা ভালো করবে। সুতরাং এই ৫১ আসন কোনভাবেই ছাড় দিতে চাননা তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর