‘জয় বাংলা’ কি ভুলে গেলেন বঙ্গবন্ধুর কামাল-কাদের?

বিবিধ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:47:25

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই শিষ্য সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন এই দুই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ।

বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কাদের সিদ্দিকীর স্বতস্ফূর্ত প্রতিবাদ; খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদানের প্রস্তাব ড. কামালের প্রত্যাখ্যান; আজো দেশের রাজনীতির এক অন্যন্য ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেলে কারাবন্দি থাকাকালীন ড. কামালও সেখানে বন্দি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ জানানোয় তৎকালীন শাসকদের রোষের শিকার হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন কাদের সিদ্দিকী। তাঁর বঙ্গবীর উপাধিও বঙ্গবন্ধুরই দেওয়া।

দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন দুইজনই। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ, ড. কামাল হোসেন ও কাদের সিদ্দিকীর পথ তিন দিকে বেঁকে যায়। ড.কামাল গণফোরাম ও কাদের সিদ্দিকী কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ গঠন করে ভিন্নধারার রাজনীতি শুরু করেন।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গেলেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা সব সময় প্রকাশ্যে বলে আসছেন তাঁরা। যে কোনো সভা, সেমিনার, সাক্ষাৎকার, জনসভায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথাই স্মরণ করতেন। এমনকি জনসভায় ‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তৃতা শেষ করতেন তাঁরা।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শুরুতেও ড. কামালের কণ্ঠে সেই বাক্য ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐক্যফ্রন্টের জনসভায় তার ব্যতিক্রম দেখা গেল।

সভায় বিএনপি নেতাদের আধিপত্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ড. কামাল হোসেন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মুহাম্মদ মনসুর ও মাহমুদুর রহমান মান্না। বক্তব্যে ‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে সুলতান মনসুর বক্তব্য শেষ করলেও বঙ্গবন্ধুর প্রিয় শিষ্য কামাল ও কাদের তা করেননি।

কাদের সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি কিন্তু বিএনপি যোগদান করি নাই, ড. কামাল হোসেনের ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করেছি। শেখ হাসিনা আপনাদের বিজয়ীও করতে পারবে না, পরাজিতও করতে পারবে না। যদি বিজয়ী হতে চান তাহলে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি ভুলে যান। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতাকাতলে নির্বাচন পর্যন্ত অন্তত হিমাদ্রীর মত সোজা হয়ে দাঁড়ান।’

৫ নভেম্বর রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় ড. কামাল হোসেনর পায়ে সালাম করে ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন কাদের সিদ্দিকী।

শেখ হাসিনার সমালোচনা করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএনপি প্রথম রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে এটা সত্য নয়, আওয়ামী লীগ রাজাকারের গাড়িতে পতাকা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রথম রাজাকার নুরু মওলানা, মহিউদ্দিন ও আশিকুর রহমানের গাড়িতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘খালেদার মুক্তি চাওয়ার দরকার নাই, আমাদের চিন্তা কিরতে হবে হাসিনার মুক্তি কবে হবে। খালেদা জিয়া জেলখানায় গিয়ে গণতন্ত্রের প্রতীক হয়েছেন।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে স্বাধীনতা এনেছিলাম, আজ বলে যাচ্ছি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে এই পল্টন থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করি। সেই সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করি। গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দলের নেত্রীকে শ্রদ্ধা জানানো হবে না, সেই দেশে গণতন্ত্র চলতে পারে না। এই দেশে যা হচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না।’

সরকারের কথার দাম নেই জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘সরকারের কথার এক পয়সার দাম নাই। পুরো পাঁচ বছর অনির্বাচিতভাবে চালিয়ে দিলেন, এটা কি ধরণের কথা। আশ্চর্য লাগে। এগুলো করে গণতন্ত্রের কথা, সংবিধানের কথা বলেন কিভাবে।’

অন্য যে কোনো দিন বক্তব্যে একাধিকবার বঙ্গবন্ধুর নাম নিলেও এই সভায় একবারের জন্যও ড. কামাল তা করেননি। বক্তব্য শেষ করেছেন তাঁর পরিচিত স্লোগান ‘জয় বাংলা/জয় বঙ্গবন্ধু’ ছাড়াই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর