‘আ.লীগের লোকেরাই নৌকায় আর ভোট দিতে চাচ্ছে না’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 03:59:41

ইউনিয়ন পরিষদের চিত্র দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের লোকেরাই নৌকায় আর ভোট দিতে চাচ্ছে না। দীর্ঘদিন যারা আওয়ামী লীগ করে আসছে, তারা এখন আর আওয়ামী লীগ করতে চাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি ।

রোববার (১২ ডিসেম্বর) জাপার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক প্রস্তুতিমূলক সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

জিএম কাদের বলেন, আবার বিএনপির অবস্থা আরও খারাপ। রাজনীতিতে তাদের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। নেতৃত্ব নিয়েও বিএনপির নেতা-কর্মীরা হতাশাতাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দেশের মানুষও বিএনপির ভবিষ্যত নিয়ে হতাশ। আওয়ামী লীগ নেতারাই বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ছিলো আওয়ামী লীগের জন্য শেষ সুযোগ। জাতীয় পার্টির সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যেতে না পারলে আওয়ামী লীগ শেষ হয়ে যেতো।

তিনি বলেন, ১৩ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকে ইতিমধ্যেই বিএনপি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৩১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থেকেও জাতীয় পার্টি রাজনীতির মাঠে টিকে আছে। জনগণের ভালোবাসা নিয়ে জাতীয় পার্টি দেশের মানুষের বুকে আস্থা সৃষ্টি করতে পেরেছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ আর বিএনপির পালাবদলের রাজনীতি দেখতে চায় না। দেশের মানুষ আগামী দিনে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বারবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করেছে। তিনি বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে গণআন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন করেছি। মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ জীবন দিয়েছিলো একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের আশায়। কিন্তু, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, ব্যবসা করতে পারে না।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এক সময় পশ্চিম পাকিস্তান আমাদের সম্পদ লুট করেছে। এখন আমাদের দেশের মানুষ আমাদের সম্পদ লুট করছে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশ হয়, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যমের রিপোর্টে আমরা জানতে পারি আমাদের দেশের টাকা লুটের সংবাদ। দেশের গণমাধ্যম এমন সংবাদ প্রকাশ করতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনাও আমরা বিদেশি একটি গণমাধ্যমের রিপোর্টে জানতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনা কয়েক মাস গোপন রাখা হয়েছিলো। আবার এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনও জানতে পারেনি দেশের মানুষ।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সংবিধানের মূল চার নীতির তিনটি প্রায় শেষ করে দিয়েছে। সংবিধানের মূল নীতির গণতন্ত্র এখন আর নেই। দেশে সাংবিধানিকভাবেই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যিনি সরকার গঠন করেন তিনি নির্বাহী বিভাগের প্রধান হন। আবার যেখানে সরকার প্রধানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে সেই আইন সভা সংবিধানের ৭০ ধারার কারণে সংবিধানিকভাবেই সরকার প্রধানের হাতে। আর বিচার বিভাগ রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রায় ৯৫ ভাগই সরকার প্রধানের হাতে। এমন অবস্থায় যিনি সরকার প্রধান হবেন তিনিই একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন। এতে সরকার প্রধান আইনের ঊর্ধ্বে থাকেন। তাই গণতন্ত্র চর্চা সম্ভব নয়, সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা থাকে না, বৃদ্ধি পায় দুর্নীতি। তাই শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির লাঙলে ভোট দিতে অপেক্ষা করে আছে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, যে লেখাপড়া দেশে বেকারত্ব বাড়িয়ে দেয় তেমন শিক্ষা ব্যবস্থা আমরা চাই না। আমরা চাই কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। পড়াশোনা শেষ করে যেনো ছেলেরা কাজ পায় সেজন্যই আমাদের রাজনীতি। দেশের চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিচার পেতে সাধারণ মানুষ ঢাকার দিকে ছুটে আসেন।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, কাফরুল থানার সভাপতি মো. শামসুল হক, হাতিরঝিল থানা আহ্বায়ক হাজী মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সরকার, রামপুরা থানার সভাপতি কাজী আবুল খায়ের, গুলশান থানার সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, বাড্ডা থানার সভাপতি মো. মহিউদ্দিন ফরাজি, ভাষানটেক থানার সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন দুলাল, জাতীয় ছাত্র সমাজের সহ সভাপতি কণক চৌধুরী প্রমুখ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর