আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভবনটি আওয়ামী লীগের অফিসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি একতরফা ও প্রহসনমূলক নির্বাচন করতে তার আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। তারা সরকারি দলকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। সরকার প্রতিনিয়ত আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিরোধী দলকে যেখানে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী প্রাপ্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না, সেখানে সরকারি দলকে নানা ধরনের তথ্য দিয়ে সুবিধা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সরকারি দলের লোকজনদের অবাধ বিচরণ ঘটছে। নির্বাচন ভবনটি আওয়ামী লীগের অফিসে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্দেশেই পরিচালিত হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কিছু কর্মকর্তা।’
সরকারের নির্দেশ প্রতিফলনের জন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত তাদের ভবনে অফিস করছেন আওয়ামী লীগের নির্বাচন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা।
বাবলার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একটি সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান বাবলা। এরপর সর্বশেষ গত ৭ নভেম্বর ও ১৪ নভেম্বর দু’দফা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে নির্বাচন কমিশনে যান বাবলা। তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এই বাবলার ভয়ে তটস্থ নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন স্তরের মেধাবী কর্মকর্তারা। গোপনে তথ্য না দিলে তাদেরকে সরকারবিরোধী লোক বলে অভিযুক্ত করে বদলিসহ নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে থাকেন তিনি।’
এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গত এক-দেড় বছরে এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা নির্বাচন কমিশনের নজরে আনা হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ নানা ভাবে বাবলাদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন। অনুমতি ছাড়া অবাধে যাতায়াত করেন কমিশনের কর্মকর্তাদের কক্ষে। ইসির গোপনীয় তথ্য আওয়ামী লীগের অফিসে পাচার করে থাকেন। নির্বাচন কমিশন থেকেও তাকে দেয়া হয় বিশেষ ধরনের সুবিধা। তবে কমিশনের কিছু সরকারি সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সঙ্গে রয়েছে তার বিশেষ সখ্যতা। আমাদের কাছে এ ধরনের অনেক তথ্য প্রমাণ রয়েছে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘বিশেষ করে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহমেদ খানের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুবই ভালো। এই ফরহাদ আহমেদ খান সরকারের বিশেষ সুবিধাভোগী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলার আগের দিন পুলিশের আইজিকে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সভা-সমাবেশ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তার স্বাক্ষরকারী এই ফরহাদ আহমেদ খান। ফরহাদ ও বাবলা যৌথভাবে ইসি ও সরকারে নানা ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদেরকে স্মার্ট পরিচয় পত্র নির্বাচন কমিশন থেকে সংগ্রহ করে দেন এই বাবলা।’
সরকারি দল আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রী-এমপিরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, বক্তব্য রাখছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রকার আচরণবিধি তৈরি হয়নি। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থায় জগাখিচুড়ি অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন না ঘটিয়ে বরং সরকার বিরোধীদেরকে নানাভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সরকার দলের নেতাকর্মীরা আচরণবিধি ভঙ্গ করলেও নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং নির্বাচন কমিশনকে নানাভাবে ব্যবহার করছে সরকার। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও আজ তা ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে’ পরিণত হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে বাবলার অবাধ বিচরণই সেটির প্রমাণ।’