রাজনৈতিক পরিবেশ কী আবারও উত্তপ্ত হচ্ছে?

বিবিধ, রাজনীতি

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:34:40

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ হয় বিরোধী দলগুলোর। সংলাপে প্রত্যাশিত সফলতা না আসলেও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলই নির্বাচনে আসার ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টসহ রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে আসার ঘোষণার পর; কয়েকদিনের জন্য হলেও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনায় আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি নিজেদের ফরম বিক্রি ও জমা দেওয়া শেষ করে।

একইভাবে বিএনপিও প্রথম ২ দিন উৎসাহ ও উদ্দীপনায় নিজ কার্যালয়ে ফরম বিক্রি করে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তৃতীয় দিনে এসে। বুধবার (১৪ নভেম্বর) মনোনয়ন ফরম কিনতে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার জের ধরে গত কয়েকদিন ধরে চলা রাজনৈতিক অঙ্গনের সু-বাতাস আবারও পুরোনো ডায়াগ্রামে ফিরে গেছে।

বিশ্লেষকদের অভিমত হলো, পল্টনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী রাজনৈতিক পরিবেশ আবারও সংঘাতের দিকে যেতে পারে। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভূমিকা বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের গাড়ি পোড়ানো ও ঘটনার পর আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান নির্বাচনী পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করে তুলতে পারে।

ইসির ব্যর্থতার কারণে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলেও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। তাদের অভিমত হলো, ইসি যদি সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আগে থেকেই চিঠি দিত যে- মনোনয়ন ফরম বিক্রির সময় মিছিল-শোভাযাত্রা করা যাবে না, তাহলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। ইসি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বলেই এ উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

ইতোমধ্যে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পল্টনের সংঘর্ষের ঘটনার অভিযুক্তদের ছবি দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য সবার কাছে সাহায্য চেয়েছে ডিএমপি। আর এর পরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি আরেক উত্তপ্ত পরিবেশ। হামলাকারীদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে নানা তথ্য ছড়িয়ে পরে ভার্চুয়াল জগতে।

বিএনপির নানা পর্যায় থেকে পল্টনের ঘটনার জন্য ছাত্রলীগের দিকে অভিযোগ তুলছে। এদিকে বিএনপির এমন অভিযোগে চটেছে ছাত্রলীগ। মিথ্যাচার করায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ছাত্রলীগ। অন্যদিকে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বিএনপি আবারও আগুন সন্ত্রাসের দিকে ফিরে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন। এক কথায় রাজনীতিতে চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঘটনা।

এসব বিষয় নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, নয়া পল্টনের ঘটনার পর থেকে নির্বাচনী পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবে এ অবস্থার সমাধানের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। ইসির উচিৎ সব দলের জন্য সমান সুযোগ নির্বাচনে নিশ্চিত করতে। না হলে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।

বিএনপির নেতারা শুরু থেকেই পল্টনের ঘটনার জন্য সরকারি দল ও ইসিকে দায়ী করছে। তাদের বক্তব্য হলো, ইসি সরকারের কথা মতো আচরণ করছে এবং বিএনপিকে বিভিন্নভাবে কোণঠাসা করা চেষ্টা করছে। এছাড়া মনোনয়ন নেওয়ার সময় বিএনপির জনসমর্থন দেখে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপির নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুলিশ ও সরকার ষড়যন্ত্র করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ইসি সরকারের কথা মতো বিএনপির জনসমর্থনকে ঠেকাতে কদিন আগে পুলিশকে আচরণ বিধির চিঠি দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মনোনয়নের সময় এটা দেওয়া হয়নি।

তিনি বলেন, সরকার ও পুলিশ নিজেদের লোক দিয়ে ঘটনা ঘটিয়ে এর দায়ভার এখন বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে।

অন্যদিকে নয়া পল্টনের ঘটনাকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করতে এবং (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার নির্বাচিত সরকারকে হটানোর জন্য বিএনপি নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়েছে এবং নাশকতা চালিয়েছে।

পুলিশও পল্টনের সংঘর্ষকে পূর্ব পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জাম মিয়া বলেছেন, ‘নয়াপল্টনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তারা সবাই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। সেখানে পুলিশকে হামলা করার পাশাপাশি বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর একটা পূর্বপরিকল্পনা ছিল।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর