চার নেতার দ্বন্দ্বে আটকে আছে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

বিবিধ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:52:53

সম্মেলনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়েই চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনের গতি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়ে গেলেও তাদের কাছে সাংগঠনিক কোনো দিকনির্দেশনা নেয়। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এ বিলম্বের জন্য বর্তমান ও সাবেক চার শীর্ষ নেতার বিরোধ ও সমন্বয়হীনতাই দায়ী বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের দ্বন্দ্বেই আটকে আছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

গত ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন ৩২৩ জন। নানান জল্পনা ও বিলম্ব শেষে ৩১ জুলাই রাতে শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। শোভন-রব্বানীকে দ্রুত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করারও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

বঙ্গবন্ধুকন্যার সরাসরি তত্ত্বাবধানে নেতা নির্বাচিত হওয়ায় তাদের উপর সবার প্রত্যাশাও বেড়ে যায়। কোটা সংস্কার, সড়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নফাঁসের আন্দোলনে দায়িত্বশীল আচরণে ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন শোভন-রব্বানী।

কিন্তু সাড়ে তিন মাসেও কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে না পারায় প্রত্যাশার বেলুন ধীরে ধীরে চুপসে যেতে থাকে। এতে ‘নাখোশ’ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও।

জানা যায়, কমিটির আকার নিয়ে শুরুতেই মতবিরোধ হয় শোভন ও রব্বানীর মধ্যে। নির্বাচনের আগে শোভন চেয়েছিল একটি ছোট আকারের কমিটি করতে অন্যদিকে রব্বানীর মত ছিলো কিছুটা মাঝারি আকারের কমিটি করতে।

এই দ্বন্দ্ব মেটাতেই বেশ কয়েকদিন সময় নেন তারা। এরপর সাবেক সভাপতি সোহাগ ও সম্পাদক জাকিরের সঙ্গেও কমিটি নিয়ে কয়েক দফা মিটিং করেন তারা। তখন ৫১ সদস্য নিয়ে কমিটির যে খসড়া তৈরি করেন তাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের বর্তমান সভাপতি-সম্পাদকদের বাদ দেওয়া হয়।

খসড়ার পর হলের সভা করে সে সিদ্ধান্তের কথা বাদ পড়াদের জানিয়ে দেন শোভন-রব্বানী। কিন্তু হল সভাপতি-সম্পাদকদের কঠোর বিরোধীতায় ভেস্তে যায় সে পরিকল্পনা। আভ্যন্তরীণ সমালোচনার মুখে হল সভাপতি-সম্পাদকদের যোগ করে আরেকটি খসড়া করে গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে যান শোভন-রব্বানী। কিন্তু সেই রাতে তাদের বিমুখ হয়ে ফিরে আসতে হয়।

সূত্র জানায়, ঐ দিন সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার আনন্দ মিছিলে অংশ না নিয়ে শোভন-রব্বানী গণভবনে থাকায় নাখোশ হন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্নাঙ্গের জন্য সাবেক দুই নেতা সোহাগ-জাকিরের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটির খসড়া তৈরির স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ অবস্থায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার জন্য সোহাগ-জাকিরের কাছে বিগত কমিটির পদপ্রত্যাশীদের নামের তালিকা চায় শোভন-রব্বানী। যে তালিকা তারা এখনো হাতে পাননি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক প্রিন্স বার্তা২৪কে বলেন, ‘সচরাচর রানিং প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি, সাবেক প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারিদের সঙ্গে মিটিং করে, সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে। নামের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয় না। সেক্ষেত্রে নেতৃত্বের দুর্বলতা কমিটি না হওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে।’

ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বার্তা২৪কে বলেন, ‘নির্বাচনের আগ মুহুর্তে ছাত্রলীগের কমিটি নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে সম্মেলন হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গের জন্য কিছুই করা হয়নি। এতে নির্বাচনের আগে জ্যেষ্ঠ কর্মীদের মনোবল ধরে রাখা কঠিন হতে পারে।’

কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নিস্ক্রিয় ছাত্রলীগের অধিকাংশ জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মী। অধিকাংশ দিন দুপুর বেলাও মধুর ক্যান্টিন ফাঁকা থাকে। কোনো সাংগঠনিক নির্দেশনা না থাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিচরণ করছেন তারা। কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় হতাশা অনেকের চোখে মুখে। গঠনতন্ত্র অনুসারে বর্ধিত সভা না করে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠন ও ভাঙায় শোভন-রব্বানীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা।

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। গোলাম রব্বানী বার্তা২৪কে বলেন, ‘সব মহলে গ্রহণযোগ্য হয় এমন একটি কমিটি গঠনে কাজ করে যাচ্ছি। খুব শিগগির আংশিক কমিটি প্রকাশ করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর