আসন না পেলে পল্টি মারতে চান এরশাদ

বিএনপি, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-22 01:48:41

কমপক্ষে ৫০টি আসন না পেলে মহাজোটে থাকতে চান না হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার ঘনিষ্ঠদের এমন আভাস দিয়ে বলেছেন, এর নীচে নামতে পারবো না, প্রয়োজন হলে মহাজোটেই যাবো না।

জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনের বিষয়টি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। কিন্তু ঠিক কতটি আসন জাপাকে দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে রয়েছে খোদ এরশাদও। এরশাদের একান্ত ঘনিষ্ঠ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত পাওয়া গেছে।

আসন সমঝোতা না হওয়ায় একাধিক দফায় তাগাদা দিয়েছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। কিন্তু তার এই আহ্বানের এখনও সাড়া মেলেনি। সর্বশেষ ১৯ নভেম্বর আসন বন্টনের বৈঠক চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন। সে চিঠিরও কোনো জবাব মেলেনি। এরশাদ চান দ্রুত আসন বন্টন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ধীরে চলো নীতি। অর্থাৎ শেষ মুহূর্তে সমাধা করতে চান। যাতে আর বাগড়া দেওয়ার সুযোগ না থাকে।

অনেকদিন ধরেই এরশাদ এই আসন বন্টনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে কয়েকমাস আগে ১’শ আসনের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। ওই তালিকা দিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচনের জন্য ১’শটি আসন দেওয়ার দাবি জানায়। এরপর সেই চাওয়া সত্তর আসনে গিয়ে আটকে ছিলো।

জাপার পক্ষ থেকেই আড়ালে আবডালে বলা হতো আওয়ামী লীগ তাদের ৭০টি আসন দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। এসব কথায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিলো প্রাণচাঞ্চল্য। কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে আসার পর আস্তে আস্তে বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জোট শরীকদের ৬৫ থেকে ৭০ আসন দেওয়ার ঘোষণায় মুষড়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা।

জাপার নেতারা মনে করছেন সব মিলে ৭০ আসন হলে তাহলে জাপার ভাগ্যে কি আছে। জাপা ছাড়াও তাদের শরীক ১৪দল, সমমনা জোট যুক্তফ্রন্ট ছাড়াও আরও অনেক হিসেবে নিকেশ রয়েছে। জাপাকে নাকি ৪০টি আসন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাপা কমপক্ষে ৫৫ থেকে ৬০টি আসন পেতে চায়। এরমধ্যে বৃহত্তর রংপুরের ২২ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি। কিন্তু আওয়ামী লীগ রংপুরের ফিফটি ফিফটি করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সর্বশেষ জাপার পক্ষ থেকে ২০০৮ সালের মহাজোটের ফর্মূলা ফলো করার বিষয়ে আলোচনা পাড়া হয়েছে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ৪৯টি আসন দেয়। কয়েকটি ছিলো উন্মুক্ত। আবার রংপুর-৪, রংপুর-৫, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহসহ বেশ কয়েকটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্রোহী হিসেবে থেকে যায়। আর সবটাতেই আওয়ামী প্রার্থীর কাছে জাপার প্রার্থীরা ধরাশায়ী হয়।

বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য মহাজোটের লিঁয়াজো প্রক্রিয়ার অন্যতম সদস্য জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, মনে হয় ৫০টি আসনের সমঝোতা হবে। আর ২০০৮ সালের চুক্তিই হবে বন্টনের ভিত্তি। তবে কিছু আসন রদবদল হতে পারে। আমরা বলেছি এবার কোনো ভাবেই বিদ্রোহী থাকা যাবে না। গোয়েন্দা রিপোর্টে ৬৫টি আসনে জাপার ভালো অবস্থান উঠে এসেছে।

এরশাদ যে পল্টি মারতে চান, সেটার সম্ভাবনা বা ফরমুলা কি। সম্প্রতি একটি কথা চাউড় হয়, এরশাদের ব্যক্তিগত দু’জন প্রভাবশালী স্টাফ জাপাকে ঐক্যফ্রন্টে নেওয়ার চেষ্টা করেন। যার একজন বিগত নির্বাচনে এরশাদের পল্টিমারার অন্যতম পরামর্শদাতা দিলেন। যে কারণেই নাকি তফসিল ঘোষণার আগে এরশাদ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথাও বলাবলি করেছিলেন সভা সমাবেশে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এরশাদ এবার পল্টি মারতে পারবেন তো? এই প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা অনেকেই নেগেটিভ জবাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন, গতবার হঠাৎ ইউটার্ন নেওয়ার পর এরশাদ তার প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। তার সেই ঘোষণায় ২২৮জন  মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। কিন্তু অল্প সংখ্যক প্রার্থী রওশন এরশাদের নেতৃত্বে মাঠে থেকে যায়।

যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তাদের বেঈমান বলে আখ্যায়িত করেন এরশাদ। সুযোগ পেলে শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরো পাঁচ বছরে এরশাদ ঘোষিত সেই বেঈমানরাই পার্টির মসনদে। জাদুর কাঠিও তারাই নাড়ছেন। কমবেশি সবাই প্রমোশন পেয়ছেন উচ্চপদে আসীন। সে কারণে যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছিলেন তারা আর এরশাদকে বিশ্বাস করেন না। এবার এরশাদের কথায় তারা হয়তো মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

আবার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ আগেভাবেই প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে ইউটার্ন প্রসঙ্গ উঠলে, রওশন এরশাদ বলেন, ওনি ইউটার্ন নিবেন কি করে। আমি আছি না। অর্থাৎ এরশাদ যদি ইউটার্ন নেয় তাহলে গতবারের তুলনায় রওশনের জন্য পরিস্থিতি থাকবে অনেকটা বেশি অনুকূলে। ২০১৪ সালে তাকে প্রার্থী খুজতে হয়েছে। আর এবার তাকেই হয়তো অনেকে খুঁজবেন এমনটাই মনে করেন সিনিয়র নেতারা। আবার লাঙল প্রতীকও রওশনের নামেই রয়েছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, রাজনীতির মেরুকরণের কারণে যদি জোট করতে হয়। দল ও তোমাদের ভালো হয় এমন সিদ্ধান্তই নেবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর