আ.লীগের দ্বিতীয় দূর্গ কিশোরগঞ্জে মনোনয়ন দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ

বিএনপি, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 13:05:07

গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দুর্গ বলে পরিচিত কিশোরগঞ্জে মনোনয়ন দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছে। এরই মধ্যে রক্তাক্ত সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করায় দলীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই আভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়ছে।

আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, 'যেভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত-সংঘর্ষ বাড়ছে, তাতে পরিস্থিতি ক্রমেই নাজুক আকার ধারণ করছে। জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা সাপেক্ষে সংঘাত না কমালে নির্বাচনে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।'

কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি নির্বাচনী আসনেই আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে চলছে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। সবাই সর্বশক্তি নিয়ে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। কর্মী-সমর্থকরাও এলাকার নিয়ন্ত্রণ ও জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থান নিচ্ছে।

বুধবার (২১অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ-২ আসনে (পাকুন্দিয়া ও কটিয়াদি)  সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যকার অস্ত্রের মহড়ায় একাধিক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ এ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন মর্মে প্রচার হওয়ার পর বর্তমান এমপি এডভোকেট সোহরাবউদ্দিনের সমর্থকদের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী একাট্টা হয়েছেন। নৌকার বদলে মহাজোটের শরীক দলকে মনোনয়ন দেওয়া হলে যে কোনও মূল্যে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থা চলছে কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে। পাকিস্তানপন্থী গভর্নর আবদুল মোনেম খানের আদিবাড়ির এই আসনটি আওয়ামী বিরোধী দক্ষিণপন্থীদের ঘাঁটি বলে পরিচিত। অতীতের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের ফলও আশানুরূপ নয়। এই আসনে বর্তমান এমপি আফজালের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ছয়জন মনোনয়ন প্রত্যাশী জোটবদ্ধ হয়েছেন। সন্ত্রাস, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতির অভিযোগ এনে বর্তমান এমপিকে মনোনয়ন না দিতে এলাকায় একাধিক সমাবেশ হয়েছে। তরুণ ও উদীয়মান নেতারা বর্তমান এমপির বদলে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে 'আফজাল হটাও' আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নাজুক এ আসনে প্রার্থী নিয়ে দলীয় ঐকমত্য না হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৪ ( ইটনা, মিটামইন, অষ্টগ্রাম) আসনেও প্রথমবারের মতো দ্বন্দ্ব ঘণীভূত হয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির সাবেক আসনে তার পুত্র এমপি তৌফিকের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট কামরুল আহসান শাহজাহান দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করায় দলের নির্বাচন পরিস্থিতিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। 

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনে সৈয়দ আশরাফ ছাড়াও তার তিন ভাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে চান। রাষ্ট্রপতির মেজো পুত্র রাসেল আহমেদ তুহিনসহ এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক ডজন। সকলেই মাঠে ময়দানে নিজেকে যোগ্যতর প্রমাণের জন্য কাজ করছেন।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব ও কুলিয়ারচর) আসনে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র, বর্তমান এমপি নাজমুল হাসান পাপনের বিরুদ্ধেও দলের একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী।

জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'অতীতে দলীয় ফোরামের মতামত নিয়ে প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার ফ্রি স্টাইলে বহুজন প্রার্থী হয়েছেন। এলাকায় টাকা-পয়সা খরচ করে তারা কিছুটা জনপ্রিয়তা ও শক্তি অর্জন করেছেন। নির্বাচনে এরা যদি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে তাহলে দলের দ্বিতীয় দূর্গে ফলাফল বিপর্যয় হতে বাধ্য।'

সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আস্থাভাজন একক প্রার্থী ঠিক করে দ্বন্দ্ব,  সংঘাত ও অনৈক্য দূরীকরণের জন্য কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা, অতি দ্রুত দ্বন্দ্ব  নিরসন না করা হলে উত্তাপ ও উত্তেজনায় দলের বিরাট ক্ষতি হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর