পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী এড়াতে ব্যাংককে জিএম কাদের!

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 22:48:01

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি পদ্মা সেতুর উদ্বোধনীয় অনুষ্ঠান এড়াতে বিদেশ সফরে গেছেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র দাবি করেছেন। দেশে থাকলে নানা রকম প্রশ্ন উঠতে পারে তাই এই কৌশল বলে অনেকে মনে করছেন।

তারা মনে করছেন, জিএম কাদের আর সরকারের সঙ্গে মাখামাখা সম্পর্ক দেখাতে চান না। আবার এই মুহূর্তে পুরোপুরি বয়কট করতেও সিনিয়র নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন না।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংককে চিকিৎসাধীন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে দেখার জন্যই এই সফর। তবে পার্টির এই বক্তব্য ধোপে ঠিকছে না। কারণ সোমবার (২৭ জুন) দেশে ফিরতে যাচ্ছেন রওশন এরশাদ। দুই দিন পর যিনি দেশে ফিরছেন তাকে দেখতে যাওয়া হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। গত নভেম্বরে মুমূর্ষ অবস্থায় রওশন এরশাদকে চিকিৎসার জন্য বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এতদিন দেখতে না গিয়ে যখন সুস্থ হয়ে দেশের ফেরার প্রস্তুতি নিয়েছেন তখন দেখতে যাওয়াকে লোক দেখানো বলে মনে করছেন অনেকেই।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রকাশ্য কোন ঘোষণা না দিলেও গোপনে স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান না করার জন্য। এমনকি পদ্মা সেতুর প্রস্তুতি সভায় যোগদান থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলের বরিশাল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রত্না আমিন হাওলাদারকে। আওয়ামী লীগ নেতা আবু হাসনাত আব্দুল্যাহ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে বসেছিলেন বরিশাল অঞ্চলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে।বরিশাল-৬ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় পার্টির এমপি রতনা আমিন হাওলাদকেও সেই সভায় ডাকা হয়। জাপার ওই এমপি ফোনে জিএম কাদের’র পরামর্শ ও যোগদানের অনুমতি চেয়েছিলেন। জিএম কাদের তাকে সাফ জানিয়ে দেন, কোনভাবেই অংশ নেওয়া যাবে না। এক পর্যায়ে সাফ জানিয়ে দেন, আবু হাসনাত আব্দুল্যাহ’র ডাকা সভায় যোগ দিলে তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে। পরে ওই সভায় যোগদান থেকে বিরত থাকেন রতনা আমিন হাওলাদার।

শুধু তাই নয়, বিদেশ সফরের আগে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ৭ দিনের জন্য স্থগিত করার মধ্যেও কেউ কেউ কৌশল হিসেবে দেখছেন। জিএম কাদের ২৩ জুন থাইল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে ঢাকা, সিলেট ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে যান। নির্দেশনায় বলা হয়েছে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য ৭ দিনের জন্য এই সিদ্ধান্ত। এখানেও কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজে পাচ্ছেন। তারা বলছেন সিলেট ও রংপুর বিভাগে বন্যা থাকলেও ঢাকা বিভাগের বিষয়টি রহস্যবৃত।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূলত সেতুর দুই প্রান্তে থাকা ঢাকা বিভাগের লোকজন অংশ নেওয়ার কথা। যাতে ঢাকা বিভাগের নেতারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য সাংগঠনিক তৎপরতা চালাতে না পারেন। সে জন্যেই এই অবস্থান বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিভাগে কয়েকজন সংসদ সদস্য রয়েছেন যারা আওয়ামী ঘেষা বলে পরিচিত। তারা অতীতে আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানে মিছিল নিয়ে জমায়েত হয়েছেন। এমনও হয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশনা অমান্য করে কেউ কেউ ভূমিকা রেখেছেন। তাদের ঠেকাতে জিএম কাদের’র বিশেষ কৌশল বলে মনে করেন খোদ দলের লোকজনেই।

জাতীয় পার্টির দফতর সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদান করা বা না করার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। পার্টির চেয়ার‌ম্যান, মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। সে কারণে তারা অংশ নিতে পারছেন না। দলীয় সংসদ সদস্যরা চিঠি পেয়েছেন, তারা চাইলে অংশ নিতে পারবেন।

কেউ অংশ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই মুহূর্তে আমার জানা নেই।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি যতটুকু জানি দলীয় সংসদ সদস্যসহ যারা আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন তারা অনেকেই অংশ নিয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর