ভোটে নেই কামাল-তারেক, অযোগ্য হওয়ার শঙ্কা খালেদার!

বিএনপি, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 15:46:34

* ঐক্যফ্রন্ট জিতলে প্রধানমন্ত্রী কে?

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। জোটে নেতৃত্ব দিলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা তিনি। এদিকে ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ঐক্যফ্রন্টের শরিকদল বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান লন্ডনে ‘পলাতক’ রয়েছেন। তারা দুজনেই ভিন্ন ভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত।

জানা গেছে, নির্বাজন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুসারে বুধবার (২৯ নভেম্বর) ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। তিনহাজারের অধিক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে মনোননয়নপত্র জমা দিলেও ড. কামাল হোসেন ও তারেক রহমানের নামে কোন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়নি। নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজেদের দূরে সরে রেখেছেন কামাল ও তারেক।

তবে কারাগারে বন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ফেনী-১ ও বগুড়া-৬ ও ৭ আসন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে জমা দেওয়া হলেও সেখানে বিএনপি বিকল্প প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেননা উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে ফৌজদারী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে ‘অযোগ্য হবেন’ বলে আইনজ্ঞদের অভিমত।

সরকারবিরোধী জোটের তিন নেতা ড. কামাল, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান নির্বাচনে বিজয়ী না হলে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় দেশের সংবিধান অনুযায়ী সংসদে অনির্বাচিত কোন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না। অনির্বাচিত কোন ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ সংবিধানে নেই।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বার্তা২৪কে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে আছে যদি কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হন সেক্ষেত্রে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। তবে অনির্বাচিত ব্যক্তিরাও মন্ত্রী সভায় ‘টেকনোক্র্যাট’ কোটায় মন্ত্রী হতে পারবেন। তবে কোন ব্যক্তির যদি সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সমস্ত যোগ্যতা থাকে তিনি নির্বাচন না করলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারবেন।

ড. কামাল ও তারেক জিয়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে আগেই নিজেদেরকে সড়িয়ে নিলেন কি না? বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে ঐক্যফ্রন্ট জোট বিজয়ী হলে কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? সেই প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওয়াবদুল কাদের, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিবিদ, গণমাধ্যমের সম্পাদকেরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের একাধিকবার এই প্রশ্ন করলেও তারা সুকৌশলে সেটা এড়িয়ে গেছেন।

জানা গেছে, নির্বাচনের দৌড় থেকে সড়িয়ে রাখার জন্য বষয়কেই কারণ হিসেবে দেখছেন ড. কামাল। নির্বাচনে অংশ না নিলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখবেন। ঐক্যফ্রন্টের ‘নির্বাচনী ম্যাকানিজমে’ নিজের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। লন্ডনে ‘পলাতক’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানও মনোনয়নপত্র জমা না দিলেও তিনি সেখানে থেকেই দলের রাজনৈতিক কৌশল ও নীতি নির্ধারণে অংশ নিচ্ছেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন।

ড. কামাল প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘ড. কামাল যদি সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন না করেন তখন ঐক্যফন্ট্র জোট নির্বাচনে বিজয়ী হলেও তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তবে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতি হওয়ার পদে বাঁধা নেই। অন্যদিকে পরবর্তীতে যদি তিনি কোন উপ নির্বাচন অংশ নিয়ে জিতে আসতে পারেন তাহলে আবারও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য খুলে যাবে।’

এদিকে ঐক্যফ্রন্ট জোটের কে নির্বাচনে আছে? নির্বাচনে জিতলে তাদের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন সেটা নিয়ে ভাবছেই না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আসন্ন নির্বাচনে নিজেদের নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়েই দারুণ আশাবাদী তারা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বার্তা২৪কে বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় অর্জন করবে। তাই ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে ভাবার দরকার নাই। তারা কী করল না করল সেটা তাদের ব্যাপার। আমরা জনগণের কাছে গিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে চাই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর