আ’লীগের আশ্বাসেও নিশ্চিন্ত নয় জাপা

বিবিধ, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 03:50:48

আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নিশ্চয়তা দিলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা। তারা আবারও ২০০৮ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায় ভুগছেন বলে জানা গেছে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট গঠিত হলে জাতীয় পার্টিকে ৪৯টি আসন দেওয়া হয়। সেই আসন ভাগাভাগি ছিলো পুরোটাই কাগজে কলমে। রওশন এরশাদের দু’টি আসনসহ ১৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা থেকে যায়। তখন আওয়ামী লীগ থেকে তাদের প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও মাত্র ৩৫টি আসনে তা করা হয়।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে যাওয়া ১৪টি একটিতেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জয়ী হতে পারেননি। রওশন এরশাদ পরবর্তীতে এরশাদের ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়ে সংসদে যান। আর সংসদের বাইরে থাকতে হয়, তৎকালীন সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত কাজী জাফর আহমদকেও।

একাধিক সূত্র জানায়, এবার জাপাকে ৪৭টি আসন দেওয়ার কথা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মাঠের অবস্থা দেখে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না জাপার নেতারা। খোদ পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঢাকা-১৭ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়ে বসে আছে। রংপুর-৫ সহ বৃহত্তর রংপুরের বেশ কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর একেই আওয়ামী লীগের দুরভিসন্ধি হিসেবে দেখছেন জাপা নেতৃবৃন্দ।

এমন এক অবস্থানে রয়েছেন যেখান থেকে ফেরার কোনো পথেই দেখছেন না। নানাভাবে চাপে রাখা হয়েছে পার্টির চেয়ারম্যানকে। আবার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের ভাবগতিও এরশাদের কাছে ভালো ঠেকছে না। যে কারণে ইউটার্ন নেওয়ার ভাবনাও ভাবতে পারছেন না।

প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের ব্যক্তিগত সহকারি মেজর (অব.) খালেদ আখতারও এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি শনিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আমার আসন লালমনিরহাট-১, আসনটি নিশ্চিত আসন। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার চূড়ান্ত কথা দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়ে গেছে। তাদের  ভাবগতি মোটেই ভালো মনে হচ্ছে না।’

বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসন সংখ্যা নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট জাপা নেতাদের আরও হাতাশ করে তুলছে। অনেকেই আওয়ামী লীগের এই দ্বি-মুখী নীতিতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এমন করে আওয়ামী লীগ জাপার সঙ্গে প্রত্যারণা করলে, তারা নেতাকর্মীদের মন পাবে না। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের ভোট নৌকায় না পড়লে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত প্রার্থীর তালিকা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ জোটের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ আসন ছাড়ার ঘোষণা দিলেও মাত্র ৩৬টি আসনে মনোনয়ন দাখিল করেনি। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির জন্য যে সব আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তার মাত্র ২৫টিতে কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ চুক্তির ২২টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়ে গেছে। যে সংখ্যা ২০০৮ সালে ছিলো ১৪তে।

তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার সব সময়েই বলে আসছেন, মহাজোটের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত মহাজোট ঘোষণা করা হবে। তখন বলা যাবে কে কতটি আসন পাচ্ছে।

এদিকে বেশ কয়েকদিন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থাকার পর শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় হঠাৎ করেই বাসায় ফিরেছেন এরশাদ। হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় রিলিজ নেওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি বলে তার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করছেন না এরশাদ। দু’চারজন বাসায় গেলেও নিচ থেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত স্টাফদের চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

এরশাদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খালেদ আখতার বার্তা২৪কে বলেন, ‘স্যারকে (এরশাদকে) সিঙ্গাপুর নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ডাক্তারের তারিখ পেলেই নেওয়া হবে। হয়তো ৬ অথবা ৯ ডিসেম্বর নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর