‘গাইবান্ধা নির্বাচন প্রমাণ করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 14:48:35

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনই প্রমাণ করে, কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন চাইলেও, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

জিএম কাদের আরও বলেন, সরকার ও সরকারি দলকে খুশি করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে। গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা নির্বাচন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনকে বলেছিলাম। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনটি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারো দাবি করছি, নতুন তফসিল ঘোঘণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোন জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেবো না।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা ইভিএম-এ নির্বাচনের বিরোধিতা করছি। কারণ, ইভিএম-এ ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কোন প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে, কোন প্রমাণ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আবার, যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, সেই মাঠ প্রশাসন সরকারের অনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন এর দোষ না থাকলেও, যারা যারা ইভিএম পরিচালনা করেন তারা তো নিরপেক্ষ নয়। তাই কর্তৃত্ববাদী কোন সরকারে অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দি সহ্য করতে পারে না, প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দিতায় জিততে চায় সরকার। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করলে হামলা ও হয়রানীমূলক মামলার শিকার হতে হয়।

তিনি বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিং-এ নাকাল দেশ। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারে না দেশ। তাই চাহিদা মত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না সরকার। কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে হচ্ছে রফতানি শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা আয় হুমকির মুখে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে, সরকার ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না অভিভাবকরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না, বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা করতে পারছে না, ওষুধ কিনতে পারছে না।

জিএম কাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা সরকারি দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেস্তে আছেন। দেশের মানুষ যেনো দোযখের আগুনে জ্বলছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ টাকার অভাবে বাজার করতে পারছে না, আর একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, মৌলিক অধিকার নেই মানুষের। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে মেগা প্রকল্প গ্রহণ হচ্ছে। একটি প্রকল্পও সময় মত শেষ হচ্ছে না। এতে প্রমাণ হয়, প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাই সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে, ব্যায়ের পরিমাণ।

তিনি বলেন, গেলো সেপ্টেম্বরে এফএও একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ৪৫টি দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। এরমধ্যে এশিয়ার ৯টি ও দক্ষিণ এশিয়ার ৩টি দেশ রয়েছে। দুঃখজনকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের সাথে এই তালিকায় বাংলাদেশের নামও রয়েছে। রিজার্ভ সংকট, টাকার অবমূল্যায়ন ও বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে ব্যাহত হচ্ছে কৃষকের সেচ ব্যবস্থাপনা। আবার সারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও ব্যাহত হচ্ছে খাদ্য শস্য উৎপাদন। একই সাথে বহুগুণ ব্যয় বেড়েছে খাদ্য শস্য আমাদানিতেও। ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে পারে দেশ। এ নিয়ে সরকারের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই।

উত্তরখান থানা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলাল এর সভাপতিত্বে সম্মেলন বক্তৃতা করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপটন, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তর এর সদস্য সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিন্টু, হাজী নাসির উদ্দিন সরকার, মোঃ হেলাল উদ্দিন, কাজী আবুল খায়ের, এনাম জয়নাল আবেদিন

এ সম্পর্কিত আরও খবর