বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ এমপি বলেছেন, আগেও বলেছি, আজও বলছি, জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাদের ফিরে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।
রোববার (২৭ নভেম্বর ) দীর্ঘদিন ব্যাংককে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকুল সময়, যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন-তাদের আমাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে। আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি, আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবঝি দূর করতে বসবো। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো। এসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য এবং পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে; যেমনটি আমরা ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি। সেই ষড়যন্ত্রগুলোকে নস্যাৎ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের সবার নিকট আমি কৃতজ্ঞ।
তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্টভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।
বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।
তিনি বলেন, বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে কতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে? তাছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে “হাওয়া ভবনের” দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি। জনগণ উন্নতি ও শান্তির জন্য পরিবর্তন চায়, যা জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি। অবশ্যই তা বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।
রওশন বলেন, মনে রাখবেন রংপুর জাতীয় পার্টি প্রাণ। এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবো। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহধন্য পুত্রতুল্য এবং তাঁর পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করছি, তিনি হলেন সাবেক মেয়র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, জনমানুষের প্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। তার নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে।
নিজের স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, আমি এখন ঠিক আছি কিন্ত আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে এবং ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই। ব্যাংককে চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।