জননেতা নন, হিরোও নন তাহলে কাকে ‘খামোশ’ করতে চান ড. কামাল!

বিবিধ, রাজনীতি

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 13:21:06

বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি যতটা না রাজনীতিবিদ তারচেয়ে বেশি পরিচিত বিখ্যাত আইনজীবী হিসেবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে তরুণ বয়সেই রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান হয় তার। বঙ্গবন্ধুর আমলে এমপি, মন্ত্রীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, ড. কামালসহ আরো অনেকে নব্বইয়ের দশকে ছিলেন স্বাধীনতার বিরোধী শক্তির বিপক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর। এরপর সময় যত গড়িয়েছে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. কামালের আদর্শগত রাজনৈতিক দূরত্ব তৈরি হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল গণফোরাম। যদিও পরবর্তীতের এই দল রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। তবে গণফোরামে থেকেও ড. কামাল স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। প্রায় দুই দশক পর বর্তমানে সেই ড. কামালই ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সর্বোচ্চ নেতা’। যদিও সেটা তিনি স্বীকার করেন না। বরং জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী শক্তির সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জানতে চাইলে তার মুখ থেকে ‘খামোশ’ শব্দটি শোনা যাচ্ছে।

স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানীদের অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদে করে ‘খামোশ’ বলে তাদের থামিয়ে দিতেন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। এছাড়া সত্তরের দশকে বলিউডের অ্যাকশন হিরো শত্রুঘ্ন সিনহা ‘খামোশ’ শব্দটিকে সিনেমার ডায়লগে ব্যবহার করলে সেটিও পরবর্তীতে দারুণ জনপ্রিয় হয়। এখনও কোনো অনুষ্ঠানে গেলে শত্রুঘ্ন সিনহা ‘খামোশ’ ডায়লগটি বলার অনুরোধ পান। কিন্তু ড. কামাল হোসেন- মাওলানা ভাসানীর মতো মজলুম জননেতা কিংবা শত্রুঘ্ন সিনহার মতো সিনেমার হিরো নন। কিন্তু তিনি কাকে ‘খামোশ’ করতে চাচ্ছেন- এখন সেই প্রশ্ন নানা মহলে।

একাদশ জাতীয় সংসদের ৬ মাস আগে হঠাৎ আলোচনায় আসেন ড. কামাল হোসেন। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেন তিনি। ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত ইসলামী না থাকলেও তাদের সবচেয়ে বড় মিত্র বিএনপি যোগ দেয়। কিন্তু জামায়াত বিএনপির মিত্র থাকায় ঐক্যফ্রন্ট থেকে সরে দাঁড়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট। এমনকি জামায়াতকে ত্যাগ না করে বিএনপি’র ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ায় তীব্র আপত্তি জানান বি. চৌধুরী। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারাও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে রাজনীতি না করার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে তার মিল পাওয়া যায় নি।

পরবর্তীতে তফসিল ঘোষণার পর, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় নেতারা ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করতে একমত হন। এমনকি নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতের কমপক্ষে ২৫ জন প্রার্থীও ‘ধানের শীষ’প্রতীকে নির্বাচন করবেন। যা নিয়ে মহাজোট নেতারা তীব্র সমালোচনা করলেও চুপ ছিলেন ড. কামাল হোসেন। তবে শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে জামায়াত ইসলামী নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর রেগে যান ড. কামাল। এসময় তিনি বলেন, ‘এখন না, এখন না। এখানে (স্মৃতিসৌধে) কোনো কথা না, বাইরে। এই জায়গায়, শহীদ মিনারে আর কোনো কথা না।’

এ সময় এক সাংবাদিক জানতে চান, ‘স্যার তার (জামায়াত) দলের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, কিন্তু তারা তো নির্বাচন করবে।’ এর পর পরই ওই সাংবাদিকদের ওপর চটে যান ড. কামাল। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নই উঠে না। কত পয়সা পেয়েছ এসব প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছো এই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজনৈতিক প্রশ্ন করতে? তোমার নাম কি? চিনে রাখব। পয়সা পেয়ে শহীদ মিনারকে অশ্রদ্ধা কর তোমরা।’

এ সময় তিনি ওই সাংবাদিককে ব্যঙ্গাত্মক করে বলেন, ‘শহীদদের কথা চিন্তা করো। চুপ করো। চুপ করো, খামোশ, আশ্চর্য।’এবার ড. কামাল ওই সাংবাদিকের দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করেন, ‘তোমার নাম কি? কোন পত্রিকা।’ এ সময় ওই সাংবাদিক ‘যমুনা’বললে তিনি জবাব দেন, ‘যমুনা টেলিভিশন জেনে রাখলাম।’

২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে বন্দী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বিদেশে পলাতক বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘খামোশ’শব্দটি বড় প্রয়োজন। ড. কামাল কি তাহলে বিএনপির সেই চাওয়া পূরণ করতেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জোটের সর্বোচ্চ নেতা হয়ে স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তিকে এবার ‘খামোশ’ করতে চান- সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে।

এমনকি শুক্রবার বিকালে ড. কামালের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খামোশ বললেই মানুষের মুখ খামোশ হবে না। লজ্জা কম বলেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তারা খামোশ বলতে পারে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত, আজকে আমরা দেখি তাদের পরিবারের সদস্যদের বিএনপিসহ যে ঐক্য করা হয়েছে তাতে তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যারা এত বড় অপরাধ করলো আর যে পাকিস্তানী বাহিনীকে আমরা পরাজিত করলাম তাদের এই দোসরদের যখন ধানের শীষে মনোনয়ন দেওয়া হলো, আর এই ধানের শীষ নিয়ে যারা আমাদের সঙ্গে ছিল তারা একই সঙ্গে কিভাবে নির্বাচন করবে?’ এ প্রশ্নের উত্তর তারা জাতির কাছে দিতে পারবে? তবে হ্যাঁ, তাদের লজ্জা একটু কম লাগে বলেই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে খামোস বলতে পারে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর