নির্বাচনী রাজনীতির লাগাম কার হাতে?

বিবিধ, রাজনীতি

লুৎফে আলি মহব্বত, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 07:08:03

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা শিগগিরই আসছে। যদিও নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে উপনীত হতে পারছে না রাজনৈতিক শক্তিগুলো। বরং কয়েক দিন বিরতির পর ফের রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি।

সরকার পতনের এক দফার যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) রাজধানীতে গণমিছিল করবে বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা। অন্যদিকে, বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস ঠেকাতে মহানগরীতে ‘সতর্ক অবস্থানে’ থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের ব্যানারে ‘শান্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। এ পরিস্থিতিতে আবারও কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজপথ। উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ডেঙ্গুর মারাত্মক প্রকোপ আর বর্ষণের দুর্ভোগের মিলিত যন্ত্রণায় আবারও নাকাল হবে নাগরিকগণ।

গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব নির্বাচনকে সামনে রেখে দলগুলোর পারস্পরিক কাজিয়া থেকে রাজনীতিতে নাক গলানোর অবাধ সুযোগ পাচ্ছে বিভিন্ন দেশ। আমজনতা ও সাধারণ ভোটারদের চেয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের আগ্রহ ও তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে বাস্তবে। স্বভাবত প্রশ্ন জাগে, নির্বাচনী রাজনীতির লাগাম কার হাতে?

এই প্রশ্ন আসতো না, যদি নির্বাচনের মতো রাজনৈতিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হতো। তা না করে রাজনৈতিক দলগুলো পরিস্থিতিকে সিদ্ধান্তহীনতার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। ফোকটে নাক গলিয়ে দিয়েছে বিদেশি শক্তি। ক্রমশ বল চলে যাচ্ছে তাদের কাছে। প্রতিদিন তারা নসিয়ত করছে আর চালাচ্ছে নানাবিধ তৎপরতা। এমনকি বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর একটি পত্রিকার অফিস ঘুরে গেলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। ট্রেড মার্ক হাসি আর আতিথেয়তায় কাটিয়ে গেলেন পাক্কা দু’ঘণ্টা। গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রের পক্ষে নিজের অবস্থান জানান দিলেন তিনি আরও একবার।

সুশীল সমাজ, মিডিয়া তার স্বরে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংঘাত ছেড়ে সংলাপ ও সমঝোতার পথে চলার আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু তাদের কথা পরিণত হচ্ছে অরণ্যে রোদনে। বরং দলগুলো কথা ও কাজে আরও মারমুখী হচ্ছে। মাঠে-ময়দানে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। মীমাংসার নামে গুরুত্ব বাড়ছে বিদেশি দূতদের। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে এমনটিই দৃশ্যমান হয়েছে।

যে নির্বাচনী রাজনীতির লাগাম রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণের হাতে থাকার কথা, সেটা ক্রমশ তাদের হাতছাড়া হচ্ছে। তারা ব্যস্ত শক্তি প্রদর্শনে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই বিরোধ যতই বাড়বে, ততই প্রভাবক শক্তি হিসেবে গুরুত্ব বাড়ছে বিদেশিদের। পরিস্থিতির ইতিবাচক উত্তরণ না হলে দেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারণে তাদের ভূমিকা আরও বড় হয়ে দেখা যাবে।

নিজস্ব সমস্যা নিজেরা মিটাতে না পারলে অন্যরা সুযোগ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। আর রাজনীতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নিজেদের বদলে অন্যকে নাক গলানোর সুযোগ দেওয়া বিপদজনক। বিদেশিরা 'দেবদূত' কিংবা 'দাতা হাতেম তাঈ' নয়। তারা চলে নিজস্ব স্বার্থে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের সুযোগে তারা যে নিজেদের স্বার্থও হাসিল করবে, তা বলাই বাহুল্য।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা এখনো না হলেও নির্বাচন সন্নিকটস্থ। ফলে তার আগেই নির্বাচনী রাজনীতির লাগাম রাজনৈতিক দল ও জনগণের হাতে নিয়ে আসা দরকার। দলগুলোকে অবশ্যই আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পন্থায় সংকট মোচনের দিকে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। নচেৎ বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা তাদের জন্য মঙ্গলজনক না-ও হতে পারে। বিদেশিরা বিশ্বের যেসব দেশে নাক গলিয়েছে, সেখানেই শেষ পর্যন্ত বারোটা বেজে গেছে। আর সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে রাজনীতিবিদগণই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর