আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আর মাত্র কয়েকমাস বাকি থাকলেও নিরপেক্ষ সরকারের এক দাবিতে আন্দোলন করছে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। দাবি না মানলে নির্বাচনে যাবে না তারা।
এদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক এমপি এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) তার নির্বাচনী এলাকা। তিনি ওই আসনে বিএনপি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্যও। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সদস্য।
গত কয়েকদিন ধরে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান কমলনগর ও রামগতি উপজেলায় দলীয় মৃত নেতা-কর্মীদের কবর জিয়ারত, সভা-সমাবেশসহ স্থানীয়দের সঙ্গে গণসংযোগ করে বেড়াচ্ছেন। এসময় তিনি তার পক্ষের অনুসারীদের গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়মিত ভোটের ক্যাম্পেইন করার জন্য নির্দেশনা দেন। কারণ দীর্ঘ বছর নির্বাচনের বাইরে থাকায় এখন থেকেই গণমানুষের কাছে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বার্তা না পৌঁছালে মানুষ তার পক্ষে ভোটমুখী হবেন।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রামগতি উপজেলার রামদয়াল এলাকায় নিজ বাসভবনে দীর্ঘ বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন তিনি। ওই সময় তিনি বিএনপির শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের তীর্যক সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সবাই আওয়ামী লীগের লোক। এরা কেউই বিএনপির পক্ষের না। তিনি বলেন, এরা সুযোগ বুঝে বিএনপির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। এটা এখনো অনেকেই বুঝতে চাইছে না।
তার এমন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তার বক্তব্যর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
ওই বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি যেমন থাকবে, ভোটের প্রস্তুতিও তেমন থাকবে। কারণ হঠাৎ করে ভোট করা যায় না।আপনারা মনে করেন মানুষ ভোট দিয়ে দিবে? না। ভোটের একটা কারিশমা আছে। আমি তো একজন ক্যান্ডিডেট, গত ৮ বছর কেন্দ্রেই যেতে পারিনি। সভা-সমাবেশ গনসংযোগ করতে পারিনি ৩-৪ বছর। অতএব যেমনিভাবে আন্দোলনে সক্রিয় আছি, তদ্রুপ আমরা আরও বেশি করে ভোটের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেনো শেখ হাসিনার পতন হলেই বা শেখ হাসিনা রিজাইন করলে আমরা কাউকে না বলে ভোটে নেমে যেতে পারি। কারণ এখানে (লক্ষ্মীপুর-৪ আসন) আমিই বিএনপির একমাত্র প্রার্থী। এখানে আর কোন ক্যান্ডিডেট নাই।
তিনি বলেন, কাদের সিদ্দিকী, সুলতান মুনসুর, কামাল হোসেন, আ.স.ম রব, মাহামুদুর রহমান মান্না তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোক। ১৯৮৬ সালে বিএনপি নির্বাচন করেনি, কিন্তু আ.স.ম রব ভোট করেছে। আরও কয়েকটি ভোটে হেরে যাচ্ছিল রব। ১৯৮৮ সালে এরশাদের গৃহপালিত বিরোধী দল হয়েছে আ.স.ম আব্দুর রব। ১৯৯৬ সালে বিএনপি এক সিটের জন্য সরকার গঠন করতে পারিনি। সে আবার শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে ওই সিট দিয়ে দিছে। অতএব এ ধরনের লোকদের আমরা গ্রহণ করা থাক দূরের কথা, আশেপাশেও জায়গা দিবো না। ওরা তো আমার সঙ্গে জামানতই বাতিল হয়ে গেছে।
আ.স.ম রবকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি শুনে রাখেন, আমি ইলেকশনে দাঁড়িয়ে গেছি, ইনশাআল্লাহ। আমি শ্রমিক সমাবেশ থেকে বলে দিলাম ইলেকশনে আমি দাঁড়িয়ে গেছি। কোন হাংকি-ভাংকি রামগতি-কমলনগরে হবে না। এই বক্তব্যে প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ারর আহবান জানান তিনি।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন,রামগতি পৌরসভার সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা শাহেদ আলী পটু, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জামাল হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, দলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিএনপির সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দীন নিজানের এমন বক্তব্য নিয়ে জেলাজুড়ে এখন তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। অনেকেই তার এমন বক্তব্য ও নির্বাচনী প্রস্তুতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, আমি তার এ বক্তব্য শুনি নাই। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তিনি (আশরাফ উদ্দিন নিজান) এসব কথা বলতেই পারেন। তবে তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, ভোটের দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকতেই পারে। কিন্তু পূর্বশর্ত হলো আগে নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে। ভোটের প্রস্তুতি আমাদের সবসময় আছে। আমাদের কর্মী সমর্থকের অভাব নেই। ৩ দিন আগেও আমরা ভোটের জন্য প্রস্তুত।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান জানান, শরিক দলের অন্যান্য যেসব নেতাদের বিষয়ে বলেছি, তারা যেকোন সময় বিএনপির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে সিটকে পড়তে পারে। তাই আগে থেকেই এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়েছি।