আওয়ামী লীগ এখন র্যাব, পুলিশ, বিচার বিভাগ দিয়ে রেজিমে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে চট্টগ্রাম কাজীর দেউরী নেভাল এভিনিউস্থ তিন রাস্তার মোড়ে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখী রোড মার্চ পরবর্তী সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি এই সমাবেশের আয়োজন করে। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা আজ নেই, শুধু তার শরীরটি আছে। সেই কুমিল্লা থেকে শুরু করে লাখ লাখ জনতা আমাদের সঙ্গে এই রোডমার্চে অংশগ্রহণ করেছে। বৃষ্টি হয়েছে, তবুও কেউ যায়নি। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই রোডমার্চ দেখে শেখ হাসিনাকে শেষ বার্তা দিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগ ও কুমিল্লা রোডমার্চের যে বার্তা শেখ হাসিনাকে দিয়েছে, সেই কপালের লিখন যদি তিনি পড়তে না পারেন তাহলে সেটা তার দুর্ভাগ্য। আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নয়। র্যাব, পুলিশ, বিচার বিভাগ দিয়ে রেজিমে পরিণত হয়েছে।
আর বিএনপি পরিণত হয়েছে খাঁটি সোনায়। আমাদের ৪০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। তারা ঘরে থাকতে পারে না। তাই বিএনপি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বিএনপি নেতারা জলে ভিজে আর রোদে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের রাজনীতি ওই রেজিমের বিপক্ষে। এটা কোনো দল নয়। সরকারের নির্ভরশীলতা ভোটচুরির প্রকল্পের পুলিশ ও বিচার বিভাগের প্রতি। এ দুর্বৃত্তরা জনগণের সামনে আর দাঁড়াতে পারবে না। সারাবিশ্বের কাছে এরা ভোটচোর। এজন্য স্যাংশন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আজ সমস্ত বিরোধীদল ঐক্যমতে পৌঁছেছে। সারাবিশ্ব প্রত্যক্ষ করছে বাংলাদেশকে।
তারা বলছে, ভোটচোরদের ধরতে। এরা ভদ্র ভাষায় বলছে, আমরা ভোট চোরদের মানি না। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। এখনও সময় আছে। ফ্যাসিস্টরা কখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়ে না। তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হটাতে হবে।
সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এই স্বৈরাচারী সরকার তাদের ভোটচুরির প্রকল্প বাস্তবায়নের আবার পাঁয়তারা করছে। সে পাঁয়তারা বন্ধে আমাদের পাহারা দিতে হবে। নিবিড়ভাবে নজরদারি রাখতে হবে। ছাড় দেওয়া যাবে না। তারাও জানে, এবার তারা আগের মতো ভোটচুরি করে পার পাবে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, কুমিল্লা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোড় মার্চে লাখ লাখ জনতার সমাবেশ হয়েছে। শেখ হাসিনা এখন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সরকারের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দূরদর্শী পরিকল্পনা সফল হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রোড মার্চ কর্মসূচি সফল হয়েছে। তাই আসুন, আরামকে হারাম করে সরকার পতনের ফাইনাল আন্দোলনে নেমে পড়ি। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করি।
বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ভালবাসে। অথচ তাকে আজ মিথ্যা মামলা দিয়ে ঘরবন্দী করে রেখেছে। তিলে তিলে তাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সময় তাকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছিল। বিদেশে চিকিৎসা করাতে গেলে সেটা ধরা পড়ে যাবে। তাই তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে দেওয়া হচ্ছে না। একজন নারী হিসেবে আরেকজন নারীর প্রতি এমন অবিচার জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ১৯৭৯ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠাকাল থেকে গণতন্ত্রকে হত্যার অভিযানে ব্যস্ত। রক্ষী বাহিনী দিয়ে ২০ হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যার ইতিহাস এই আওয়ামি লীগের। এর বিচার অবশ্যই জনগণ করবে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের আমার সাথে জেল খেটেছেন। জেলখানায় বসে শুধু একটাই কাজ ছিল তার। কান্না করা ও চুলের স্টাইল করা। তাই আমি বলবো তাকে রাজনীতি থেকে রিটায়ার্ড করে অভিনয়ে নাম লিখাতে। আজ এই সমাবেশে জনগণের জনস্রোত দেখে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজছে। তাদের পালাতে দেওয়া যাবে না। পাহারা দিতে হবে। তাদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।
আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, এই সরকার দেশ ধ্বংস করেছে, ব্যাংক লুট করেছে। পদত্যাগের পর জানা যাবে কতশত কোটি টাকা তারা লুট করেছে। আমরা একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি। একদফা মানে এই সরকারের পদত্যাগ। এই সরকার জনগণের টাকায় পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ সরকারকে যদি পদত্যাগে বাধ্য করতে না পারি তাহলে তাহলে দেশকে আরো ধংস করে দিবে। আর এর ফল ভোগ করতে হবে আগামী প্রজন্মকে। তাই দেশকে বাঁচাতে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
সমাবেশের সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এক মূহুর্তের জন্যও শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। অক্টোবর মাস হবে শেখ হাসিনার পতনের মাস। অক্টোবর মাসেই শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা লন্ডন ও আমেরিকা সফরে গিয়েছেন। সেখানে আমাদের বাঙ্গালি ভাইয়েরা স্লোগান দিয়েছে শেখ হাসিনা ভোট চোর।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, দেশে খেলাপি ঋণের অবস্থা খুবই নাজুক। আইএমএফ বলছে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। বাস্তবে আছে ১৭ বিলিয়ন ডলার। যা আছে তা দিয়ে মাত্র তিন মাস চলবে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা সব বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ভিতরে ভিতরে আপস করে ক্ষমতায় এসেছে। ৮৬ সালে এরশাদের সাথে লং ড্রাইভে গিয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষ জানে। আজকে যে খেলার কথা বলছেন তা, এদেশে হবে না। আমরা দেশ ও মানুষ বাঁচানোর আন্দোলন করছি।