রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৪টি দল এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। এমন প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনসহ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক দেখাতে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এতে কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ!
দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দেওয়াকে শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি তৈরি করলেও আখেরে লাভ আওয়ামী লীগেরই। কারণ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে থাকলে বিদেশির কাছে যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখানো যাবে, একই সঙ্গে বাড়বে ভোটার উপস্থিতিও।
আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিরুৎসাহিত না করার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, বাস্তবতা হচ্ছে বড় একটা দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে পার্টিসিপেটরি ইলেকশন হয় সেটার একটা খুঁত থেকে যাবে। অতএব এখন বাকি থাকলো জনগণের অংশগ্রহণ। তাই ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গেলে বেশি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র থাকলে তারা এলাকা, পাড়া-মহল্লা থেকে আত্মীয়স্বজন সবাইকে ভোট টানে উদ্বুদ্ধ করবে। এতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, যেটা এই মুহূর্তে দরকার। এটাই হলো স্ট্রাটেজি।
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়ে নমনীয় থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ আওয়ামী লীগের বর্তমান অনেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের মনে হেরে যাওয়ার ভয় ঢুকেছে। এজন্য তারা দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার অনুরোধ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন এ বিষয়ে তার কিছু বলার নেই।
এদিকে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দল ও সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে জয়ের গ্যারান্টি চাইছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আসন ছাড়ের প্রতিশ্রুতিতেও তারা সন্তুষ্ট না। দলগুলোর দাবি আওয়ামী লীগের কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থীও যাতে মাঠে না থাকে। ক্ষমতাসীন দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন না এমনটা মনে করছেন শরিক ও মিত্র দলের নেতারা।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দায় নিতে চাইছে না দল। দলটির নেতাদের বক্তব্য- নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় জোটের সমস্যা সুরাহা করতে গিয়ে তাদের সরিয়ে দিলে নির্বাচন একতরফা রূপ নেবে।
এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দেওয়ার পেছনে যে বিষটি কাজ করছে সেটি হচ্ছে প্রথমতো ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি। কারণ যত বেশি প্রার্থী হবে তত ভালো। প্রার্থী কম থাকলে যে বিষটা মনস্তাত্ত্বিক কাজ করে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের তারাও ভাবেন যে কষ্ট করে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার তো দরকার নাই, এমনিতেই তো জিতে যাবে। এজন্য তারা বাড়িতে বসে থাকে। দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে এখানে বড় একটা পরিবর্তন আসবে।
তিনি আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন। কোনো কারণে যদি অন্য দলগুলো নির্বাচন থেকে সরে যায়, তখন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থাকলে পার্টিসিপেটরি ইলেকশন দেখানো যাবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, সবাইকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের কোনো সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপক্ষে জোটের শরিকদের ও দলীয় প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। শরিকদের আপত্তি থাকলেও নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের অস্বস্তি অমূলক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোন বিকল্প নেই।
সাধারণ ভোটারাও মনে করছেন এবারের নির্বাচন ঠিক আগের দুটির মতো হবে না। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তাদের দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের পাশাপাশি ভোটার উপস্থিতি বাড়তে পারে।