গোলক ধাঁধাঁয় জাপার নেতারা

বিবিধ, রাজনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 12:22:26

কী হচ্ছে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে, কে সেকেন্ডম্যান আর কে থার্ড ম্যান। এ নিয়ে কর্মীদের মধ্যে রীতিমতো ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। মাস খানেকের মধ্যে এরশাদ স্বাক্ষরিত চারটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি নেতাকর্মীদের গোলক ধাঁধাঁয় ফেলে দিয়েছে।

প্রথমত অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মহাসচিব পদে বসানো হয় মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে। ৩ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় যখন চিঠি দেওয়া হয় তার এক ঘণ্টা আগেও এমন পূর্বাভাসের কথাও কেউ জানতেন না।

কর্মীরা অবাক হলেও সেটাই শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়। কয়েকদিন অনেকটা নীরবে নিভৃতে সময় পার করেন হাওলাদার। এ সময় তার বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলে নতুন মহাসচিব প্রয়োজনে তদন্তের কথাও বলেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, জাপার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে মহাসচিব হাওলাদার অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হলো।

কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এই প্রচলিত প্রবাদ আবার প্রমাণিত করেন সাবেক সেনাশাসক এরশাদ। মাত্র চার দিনের মাথায় (৭ ডিসেম্বর) সবাইকে অবাক করে তার অবর্তমানে হাওলাদারকে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বভার দেন। চিঠিতে বলা হয়, ‘আমার অবর্তমানে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করবেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।’ নির্বাচনী ইশতেহারও ঘোষণা করেন হাওলাদার।

এই রদবদল নিয়ে যখন নানা রকম মুখরোচক আলোচনা চলমান। ঠিক সেই সময়ে হঠাৎ করে ছোট ভাই জিএম কাদেরকে নিজের অবর্তমানে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও পার্টির ভবিষ্যত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ।

যদিও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এমন আচরণ খুবই অস্বাভাবিক। তিনি দফায় দফায় দেশের বাইরে গেলেও কখনই কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যেতেন না। শুধু এক-এগারোর সময়ে সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তখন বলা হতো চাপ দিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়।

এখন কথা হচ্ছে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ট্যাটাস কী, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, মহাসচিব রাঙ্গাঁর স্ট্যাটাস কতোতম হবে। এই নিয়ে অনেকটা ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। যদিও সম্প্রতি এসব নেতারা এক মঞ্চে উঠেননি। মহাসচিব রাঙ্গাঁ অনুষ্ঠান করেছেন জুনিয়রদের নিয়ে, আবার হাওলাদার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন মহাসচিবকে ছাড়া।

এসব ঘটনার অল্পদিন পূর্বে যখন দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলছিলো, তখন হঠাৎ করে এক এগারোর কুশীলব মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন এরশাদ।

জাতীয় পার্টির গঠণতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যানের পদ ছিলো না। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে হঠাৎ করে জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করেন। পার্টির চালকের আসন তখন তৎকালীন বিরোধীদল নেতা রওশন পন্থীদের হাতে। পার্টির মহাসচিব ছিলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। আর বাবলুর সঙ্গে ছিলো কাদেরের দ্বন্দ্ব।

রওশন এরশাদকে পার্টির সেকেন্ডম্যান করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন রওশন পন্থীরা। অনেকটা বাধ্য হয়েই রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন এরশাদ। পরে কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনী এনে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হয়।

এ সব খেলাই চলছে জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১/ক ধারা অনুসারে। এই ধারায় এরশাদকে সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রমোশন ডিমোশন সবই করে থাকেন এর ফাঁক গলে।

কিন্তু কেন তার অবর্তমানে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে হলো। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এরশাদের শারীরিক অবস্থার কথাই সামনে আনতে চাইছেন নেতারা। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এটাও একটা রাজনীতির খেল হতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর