আ.লীগের দ্বিতীয় দুর্গ থেকে মন্ত্রীসভায় কারা আসছেন?

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 17:05:51

গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দুর্গ নামে পরিচিত কিশোরগঞ্জে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে শেখ হাসিনার প্রার্থীরা। জেলার ৬টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে মহাজোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে না দিলে দলীয় প্রার্থীই নিশ্চিত বিজয় লাভ করতেন। এদের মধ্য কে কে মন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

শেখ হাসিনার আহ্বানে নির্বাচনের মাঠে অনুপস্থিত, বিদেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ সৈয়দ আশরাফকে বিজয়ী করেছেন কিশোরগঞ্জবাসী। দলে সদ্য যোগ দেওয়া সাবেক সচিব ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ বিপুল বিজয় পেয়েছেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র নাজমুল হাসান পাপন এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক নিজ নিজ আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীদের ভিড়ে অপেক্ষাকৃত লো-প্রোফাইলের মো. আফজাল হোসেনও জয়ী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সব সময়ই কিশোরগঞ্জ থেকে একাধিক জনকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করার একটি দলীয় রেওয়াজ বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই চলছে। দলীয় সমর্থন, বিশ্বস্ততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও আনুগত্যের কারণে কিশোরগঞ্জের নেতাদের উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রহণ আওয়ামী লীগের মন্ত্রীত্বে ও সংগঠনে সব সময়ই বহাল থেকেছে।

অতীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান মন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি, আসাদুজ্জামান খান আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলনেতা, মনোরঞ্জন ধর মন্ত্রী হয়েছেন। এবারেও মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং জাতীয় পার্টির মজিবুল হক চুন্নু মন্ত্রী হয়েছেন।

সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনের পর শুধু কিশোরগঞ্জবাসীই নয়, দেশের সবাই মন্ত্রীসভায় এ জেলার প্রতিনিধিত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করছেন। সবারই জিজ্ঞাসা, কে হবেন আ.লীগের দ্বিতীয় দুর্গের নতুন সেনাপতি? বিশেষ করে, সিনিয়র নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মারাত্মক অসুস্থতার পর থেকে সৃষ্ট শূন্যতার কারণে এ প্রশ্নটি রাজনীতিতে প্রবলভাবে আলোচিত হতে থাকে। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর জেলার রাজনীতিতে কে তাঁর উত্তরসুরী হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে দায়িত্ব পালন করবেন, তা জানতে জনমনে আগ্রহের শেষ নেই।

কিশোরগঞ্জ থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের মধ্যে নবাগত নূর মোহাম্মদ আছেন আলোচনার শীর্ষে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাষ্ট্রীয় ও সরকারি দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করার অভিজ্ঞতার কারণে তাঁকে ঘিরে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রবল আশার সঞ্চার হয়েছে। দলে ও রাজনীতিতে নবাগত হয়েও স্বল্প সময়ের মধ্যে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে তিনি যেভাবে বিপুল জনরায় অর্জন করেছেন, তা তাঁর উজ্জ্বল রাজনৈতিক সম্ভাবনার ইঙ্গিতবহ। নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক যোগ্যতার কারণে তিনি মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত হলে সফলভাবে সরকারি ও দলীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন বলে সকলেই আশাবাদী।

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের নেতৃত্বে ব্যস্ত থাকার কারণে মন্ত্রীত্বের বিষয়ে অগ্রহী হন নি। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটের চলমান উত্থানধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে তাঁকে মন্ত্রীসভায় না এনে ক্রিকেটের শীর্ষ পদে রাখা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তিনিও স্থানীয় রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে স্থানীয় নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দিয়ে ক্রিকেটের উন্নয়নে অধিক মনোযোগ ও সময় দিতে পছন্দ করেন।

তরুণ ও উদীয়মান নেতা, বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জেষ্ঠ্যপুত্র ও তাঁর ছেড়ে দেওয়া নির্বাচনী আসনের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মেদ তৌফিক একটানা তিনবার সংসদ সদস্য হয়ে চমক সৃষ্টি করেছেন। হ্যাট্রিক বিজয়ের কারণে পুরো জেলার আগ্রহ তাঁকে ঘিরে। বিভিন্ন সংসদীয় কমিটি ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালনের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দুর্গম হাওরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে দৃষ্টান্তমূলক অবদান রেখেছেন তিনি। স্বচ্ছ, বিনয়ী ও নিষ্কলুষ ব্যক্তিত্বের কারণে তিনি জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য। তাঁর এলাকায় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কোনো ঘটনাও তিনি ঘটতে দেন নি। তদুপরি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর পক্ষে বিপুল সমর্থন পরিলক্ষিত হয়। তাঁকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রিয় উপ-কমিটিতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করে ভবিষ্যত নেতৃত্বের জন্য তাঁকে প্রস্তুত করার সুযোগ দেওয়া দরকার বলে কিশোরগঞ্জবাসী প্রত্যাশা করেন।

নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতায় মূলত এই তিনজনকে ঘিরেই কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের কাঠামোটি আবর্তিত হচ্ছে। জেলা ও জাতীয় রাজনীতিতে এরাই দলের সেতুবন্ধ হয়ে কাজ করছেন।

বিশেষত শারীরিক অসুস্থতার কারণে সিনিয়র নেতা সৈয়দ আশরাফের পক্ষে পূর্ণ শক্তিতে রাজনীতি ও মন্ত্রীত্বে কাজ করার বিষয়টি বেশ দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থীকে বাদ দিয়ে জাতীয় পার্টির মজিবুল হক চুন্নুকে মনোনয়ন দেওয়ার পর তাঁকে আবার মন্ত্রী করার বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামী লীগের ক্ষোভ ও হতাশাকে আরো বাড়াবে।

ফলে আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রীসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে নতুন মুখের অন্তর্ভুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার রাজনীতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজনীতির ময়দানেও আওয়ামী লীগের নতুন সেনাপতির আবির্ভাব ঘটতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর