বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্যে ছাত্রলীগের কর্মসূচি

আওয়ামী লীগ, রাজনীতি

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-04-02 15:13:57

একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী আধুনিক, স্মার্ট ও পলিসি নির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানসহ উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মহানগরী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

কর্মসূচিগুলো হলো-

>> ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হল ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি।

>> আধুনিক, স্মার্ট, পলিসি নির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সাথে মতামত আহ্বান ও আলোচনা।

>> সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গি কালোছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন।

>> বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সাথে আলোচনা।

সংবাদ সম্মেলনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, তুচ্ছ কারণে গত ২৯ মার্চ ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে স্বৈরাচারী কায়দায় বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হলের সিট বাতিল করা হয় এবং তাকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি উত্থাপন করা হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আড়ালে পরিচয় গোপন করে রাখা নিষিদ্ধ ও আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনের কর্মীদের এই অহেতুক দাবি বুয়েট প্রশাসন অবিবেচকের মতো মেনে নিলে প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে দেশের ছাত্রসমাজ ও রাজনীতি সচেতন গণতন্ত্রকামী মানুষ। এমন পরিস্থিতে ছাত্রলীগ বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের অবৈধ আদেশ হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে আদালত তা বাতিল করে দেয়। ফলে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি পরিচালনা করতে আর কোনো বাধা নেই।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগ বুয়েটের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাচ্ছে। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন। বর্তমানে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি পুনরায় শুরু হবে। কিন্তু সেটি কোনো ছাত্র রাজনীতি তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এই রাজনীতি অবশ্যই ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, সেশনজট, র‍্যাগিং-বুলিং, দখল-বাণিজ্য, হত্যা-সন্ত্রাসের ছাত্র রাজনীতি নয়। এই ছাত্র রাজনীতি হবে আধুনিক, যুগোপযোগী, বৈচিত্র্যময়-সৃষ্টিশীল, জ্ঞান-যুক্তি-তথ্য-তত্ত্বনির্ভর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া যে বাংলাদেশকে সবাইকে মিলে পিছিয়ে দিয়েছিল,দারিদ্র্যের অন্ধকারে গত ১৫ বছরে তা আবার আলোর পথে, উন্নয়ন-অগ্রগতির পথে ফিরিয়ে এনেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার পরিকল্পিত উন্নত-আধুনিক বাংলাদেশে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বোপরি আমাদের সামগ্রিক ছাত্র রাজনীতি কোনোভাবেই পশ্চাৎপদ ধারায় পরিচালিত হতে পারে না এবং আধুনিক নিয়মতান্ত্রিক ধারার ছাত্র রাজনীতির সূচনা যে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েট থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে, বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই যে সমগ্র ছাত্র রাজনীতিকে বদলে যাবার পথ দেখাতে যাচ্ছে, আজ সেই শুভ উপলক্ষ্যের উদ্বোধন।

তিনি আরও বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ র‍্যাংকিংধারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে পরিচালনা হয়, তা থেকে জ্ঞান নিয়ে, নিজেদের চর্চায় সেটি নিয়ে বুয়েট আমাদের ছাত্র রাজনীতিকে পথ নির্দেশ করবে। মহাকাশে কীভাবে অভিযান পরিচালনা করা যায়, রোবোটিকসের মাধ্যমে কীভাবে শিল্পবিপ্লব জয় করা যায়, নিজ দেশের উচ্চ প্রশিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে কীভাবে পদ্মাসেতুর মতো বড় বড় সেতু নির্মাণ করা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করা যায়, আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের মাধ্যমে কীভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় ভূভাগ ও সমুদ্রে কীভাবে অনুসন্ধান করা যায়, দেশের আমদানি কমিয়ে কীভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি করা যায়, কোন পদ্ধতিতে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করে বেকারত্বকে চিরতরে ঘুচিয়ে দেওয়া যায়, এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবেন আগামী দিনের বুয়েটে ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা।

বুয়েটের শিক্ষার্থীরাই তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, প্রথাগত ছাত্র রাজনীতিতে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেওয়া নেতৃত্বের মাধ্যমে বুয়েট শিক্ষার্থীরা পরিচালিত হবে না। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। যে নেতৃত্ব হবে আদর্শিক, দেশাত্মবোধসম্পন্ন এবং যে নেতৃত্ব বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই তৈরি করবে বিশ্বসেরা উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা।

ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের যে সিদ্ধান্ত অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গ্রহণ করা হয়েছিল, বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষে ছাত্রলীগ আইনগত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা আবার ফিরিয়ে এনেছে। বুয়েট শিক্ষার্থীদের লুণ্ঠিত হওয়া মৌলিক অধিকার ছাত্রলীগ আবার সসম্মানে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে, বুয়েটকে আধুনিক, যুগোপযোগী, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার উপযোগী ছাত্র রাজনীতি উপহার দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের আজকের এই সম্মেলন।

বুয়েটের প্রতি সম্মান জানিয়ে সাদ্দাম বলেন, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী, বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা নির্মাণে অবদান রাখা শিক্ষার্থী, বুয়েট খেলার মাঠে অস্ত্রহাতে গেরিলা প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া নারী মুক্তিযোদ্ধা, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বাঙালির মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণকারী বুয়েট পরিবারের সকল অগ্রজের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতির প্রতি বাংলার ছাত্রসমাজের পক্ষে যুগে-যুগে অতুলনীয়-অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করা সংগঠন ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা। একইসাথে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরে জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি চর্চা ও প্রসার, অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, স্বনির্ভর, মর্যাদাশীল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বুয়েটের যে অনন্য অবদান, তার প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৭১ এ বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে এদেশের ছাত্রসমাজ কেবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই পালন করেনি, অকাতরে নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সে সময় দেশের ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বদান করেছে। পুরো এই কালপর্বে ছাত্রসমাজের মাথার মুকুট হয়ে থেকেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ছাত্রলীগের ইতিহাস একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে, একটিকে ছাড়া অপরটি অসম্পূর্ণ। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ও রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজের নির্ভরতার প্রিয় ঠিকানা হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

তিনি জানান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদা সর্বদা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সর্বাগ্রে স্থান দিয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদ, অরাজকতা, সন্ত্রাস, হত্যা ইত্যাদিকে গুরুত্ব না দিয়ে পায়ে হেঁটে, সাইকেল চালিয়ে ৫৬ হাজার বর্গমাইল ঘুরে বঙ্গবন্ধু মানুষকে সজাগ করেছেন। স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের প্রতি বঙ্গবন্ধুর এই সংকল্প এতোটাই মজবুত ছিল যে, কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠ, ফাঁসির দড়ি, খনন করে রাখা কবর, নানাবিধ প্রলোভন কোনোকিছুই তাঁকে সামান্য পরিমাণে বিচ্যুত করতে পারেনি। স্বাধীনতা উত্তর রাষ্ট্র গড়ার ক্ষেত্রেও তাঁর এই চেতনা অপরিবর্তনীয় ছিল। সমকালীন প্রেক্ষাপটে একটি আধুনিক সংবিধান প্রণয়ন এবং সে আলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মাত্র আড়াই বছর রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক দিক থেকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তা নবগঠিত একটি রাষ্ট্রের জন্য পৃথিবীব্যাপী বিরল।

ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারে তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির জিঘাংসায় পরিণত হয়ে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণের পর থেকে এদেশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপরীতে পরিচালিত হতে থাকে। নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে অস্ত্রের জোরে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সেনাবাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের সবকটি পদ দখলে চলে যায় অনির্বাচিত একক ব্যক্তির হাতে।

সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও হুসাইন মহম্মদ এরশাদ দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর এই অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে একে একে এই রাষ্ট্রের সব কয়টি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায়। এই কালো ছায়া থেকে মুক্তি পায়নি এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্র ও তরুণ সমাজ। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির বদলে বিরাজনীতিকীকরণ, সামরিকতন্ত্র, হত্যা-সন্ত্রাস, অস্ত্র ও অর্থের দাপটে খেয় হারিয়ে ফেলে এদেশের ছাত্র রাজনীতিও। মেধাভিত্তিক আদর্শিক ছাত্র রাজনীতির কর্মী তৈরির ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে পাশ কাটিয়ে সেনা ছাউনি থেকে জারি হওয়া প্রেসকিপশন অনুয়ায়ী শুরু হয় ক্যাডার তৈরির প্রক্রিয়া।

সংস্কৃতিনির্ভর, জ্ঞানভিত্তিক, বিজ্ঞানসম্মত, তত্ত্বনির্ভর আধুনিক ছাত্র রাজনীতি সেসময়ই প্রতিস্থাপিত হয় নৌবিহার, টেন্ডারবাজি, ছাত্র সন্ত্রাস, অস্ত্র ও গুলির ঝনঝনানি, কমিশন বাণিজ্য, মাদকনির্ভর, ধর্মভিত্তিক, লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে। স্বাধীনতা উত্তর একটি দেশের তরুণ প্রজন্ম, ছাত্র ও যুবসমাজের যখন দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার কথা, সেসময় তাদের পরিচালিত করা হয়, দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে। সেনা-সামরিক-স্বৈরশাসক জিয়া-এরশাদের ধারাবাহিকতায় খালেদা-নিজামী গং এদেশের ছাত্র রাজনীতি ও সমাজ কাঠামোকে ধ্বংসের নতুনতর উচ্চতায় উত্তীর্ণ করে। রগকাটা, বোমাবাজি, নকল, প্রশ্নফাঁস, সেশনজট, অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, মেধার বিপরীতে দলীয় বিবেচনায় চাকরি, শোডাউন, পেশিশক্তি, দখল বাণিজ্য ইত্যাদি ছাত্রসমাজকে চূড়ান্তভাবে বিচ্যুত করে।

ছাত্র রাজনীতি পুনঃরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান উল্লেখ করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, রক্ত ও নীতি-বিশ্বাস-কর্মের উত্তরসূরী, বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অবিকল্প সারথী, বাংলার মানুষের-ছাত্রসমাজের নির্ভরতার একমাত্র ঠিকানা দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জিয়া-এরশাদ-খালেদা-নিজামীর দ্বারা ক্ষতবিক্ষত দেশকে সংস্কার ও পুনঃরুদ্ধারের কাজ শুরু করেন। সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে গেঁথে যাওয়া অপসংস্কৃতি, অপরাজনীতির কবলে দিশেহারা ছাত্রসমাজকে অস্ত্র ফেলে ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান, হাতে খাতা-কলম তুলে দেন।

সন্ত্রাস, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতায় আবদ্ধ ছাত্রসমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালু, বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষার প্রসার, বহুমাত্রিক ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার প্রচলন, উপবৃত্তি-শিক্ষাবৃত্তি, আবাসন সঙ্কট হ্রাস করা, সেশনজট-নকল মুক্ত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, মেধাভিত্তিক কর্মসংস্থান ইত্যাদি পদক্ষেপের মাধ্যমে নিরক্ষরতা দূরীভূত হয়েছে, শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, কোয়ালিটি ও যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত হয়েছে।

মাঝপথে ২০০১-০৮ পর্যন্ত আবারও হোঁচট খেলেও ২০০৯ থেকে অদ্যবধি শিক্ষা ও ছাত্রবান্ধব নেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে মেধার ভিত্তিতে কর্মজীবনে প্রবেশ করে শেখ হাসিনার নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন বলেই দেশ আজ অনুন্নত থেকে উন্নয়শীল হয়েছে। উন্নত বাংলাদেশের হাতছানি দেখছে। আমাদের শিক্ষার্থীরা আজ দেশের গণ্ডি অতিক্রম করে বহির্বিশ্বে নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে আসীন করছে।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার অভিভাবকত্বে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এদেশের ছাত্রসমাজের যাবতীয় ইতিবাচকতার পক্ষে নিরলস ভূমিকা পালন করে চলেছে। সবকিছুর পরেও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ত্রুটি স্বীকার করতে কুণ্ঠাবোধ করে না যে, জিয়া-এরশাদ-খালেদা-নিজামীর দীর্ঘকালের ধ্বংসাত্মক অপরাজনীতির আগুনের আঁচ ছাত্রলীগের শরীরেও অনুভূত হয়েছে, ছাত্রলীগকেও দগ্ধ করেছে। এই অপরাজনীতির আগুনকে নিয়মতান্ত্রিক ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে চিরস্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যেন তার অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো থেকে সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি-বিচ্যুতি ধুয়ে মুছে-সাফ করে ফেলতে পারে, সে লক্ষ্যে প্রতিটি নেতা-কর্মীকে প্রস্তুত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, সাংগঠনিক মূলমন্ত্র।

এ সম্পর্কিত আরও খবর