দলের ভার তরুণদের কাঁধে দিচ্ছে বিএনপি!

বিএনপি, রাজনীতি

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 04:13:31

নির্বাচনের ব্যর্থতার দায় এড়াতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব অনেকেই আগাম কাউন্সিলের আভাস দিয়ে দলীয় পদ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। দলের আন্দোলন সংগ্রাম ও সার্বিক কর্মকাণ্ডের মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে ত্যাগী, তরুণ নেতৃত্বের হাতে দলের ভার দিতে চান তারা।

এই শীর্ষ নেতৃত্বের মুখে এ রকম আভাস পাওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় কাউন্সিল নিয়ে এক ধরনের উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, দলে পরিবর্তন আসলে দলের জন্যই ভালো; এতে খারাপের কিছু নেই। যেহেতু সিনিয়র নেতারা নিজেরাই সেটার ফ্লোর ওপেন করেছেন। তবে কাউন্সিল হলে নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে; সেটা ভাবার বিষয়।

২০০৮, ২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ এর জাতীয় নির্বাচনে ব্যর্থতায় দায় নিয়ে সরে দাঁড়ানোর মনোভাব ব্যক্ত করে তরুণের কাঁধে দলের ভার তুলে দেওয়ার ইঙ্গিত দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে দলের অনেকেই বলছেন, তরুণরা দলের হাল ধরে বর্তমান প্রেক্ষিতে মাঠে ময়দানে নেতৃত্ব দেবে। তবে পরিবর্তন হলেও যাতে নবীন প্রবীণ সমন্বয় ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একদিকে যেমন তরুণেরা মেধা শ্রম দিয়ে দলকে গতিশীল করবে অন্যদিকে, প্রবীণদের দায়িত্ব থাকবে সেগুলো পর্যরলোচনা করা ও দিক নির্দেশনা দেওয়া। আর এই পরিবর্তন শুধু কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সম্ভব।

দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী মার্চের পরে যেকোনো সময় দলের সম্মেলন হতে পারে। সব ধরনের প্রস্ততিও ভেতরে ভেতরে নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন আগে সম্মেলন নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে অনেকে কাউন্সিলে বিষয়ে মত দিয়েছেন। এ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নবীন প্রবীণদের সমন্বয় করে সাংগঠনিকভাবে গতি আনতে চান।

তবে সম্মেলনের পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যারা সম্মেলনের পক্ষে তরুণদের জন্য নিজেদের গুটিয়ে নিতে প্রস্তুত এমন একজন নেতা বলছেন, 'তরুণদের মেধা কাজে লাগিয়ে দলকে কার্যকরী করতে হবে।'

নীতি নির্ধারকরা বলছেন, ‘পরিবর্তন হবে এটা স্বভাবিক। নতুনদের জন্য পুরাতনরা স্থান ছেড়ে দিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে পরিবর্তন হলেও নতুন পুরাতনের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে।’

নাম না প্রকাশ করার শর্তে দলের এক সম্পাদক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পরিবর্তন তো ভালো। যে কোন ভালো উদ্দ্যেশের জন্য পরিবর্তন ভালো; কাউন্সিল হলে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে পারে। কিন্তু সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যেহেতু বিষয়টা ওপেন করেছেন; এটা তো ভালো; তারা তাদের ভাবনা উন্মুক্ত করেছেন।'

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দলের পুনর্গঠন ধারবাহিক প্রক্রিয়া। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে যাতে চলে, সেটার জন্য আমরা সবাই চেষ্টা করবো। এখানে কারো ব্যর্থতা, কারো সফলতা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘দল পুনর্গঠন হলে দলের চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, স্থায়ী কমিটি, নির্বাহী কমিটি আছে; সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত হবে। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। কাউন্সিলের কোনো ঠিক নেই।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘দলের মধ্যে বিন্দুমাত্র সাংগঠনিক দুর্বলতা নেই। দলের পুনর্গঠনের করতে হলে অবশ্যই করবো; তবে এটা তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করবো। একই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গঠন করবো।’

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। তবে তাদের মধ্যে বয়সের ছাপ আছে; তা থেকে কেউ নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে না। যিনিই হোন না কেন। বয়সের পাশাপাশি অভিজ্ঞতার একটি বিষয় আছে।’

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হয়। সেই আলোচনার ভিত্তিতেই হয়তো উনারা বলেছেন অথবা উনারা মনে করেছেন যে, না, উনাদের (মোশাররফ-মওদুদ) রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সঙ্গে বর্তমান পেক্ষাপট মেলে না। হয়তো আরও একটু কম বয়সী প্রজন্মের, যারা তুলনামূলক বয়স কম; তারা এসে হয়তো আরও ভালো করতে পারবেন।’

তিনি বলেন, 'শুধু তরুণ দিয়ে হবে না। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে চলতে হবে। কাউন্সিলের নির্দিষ্ট সময় তো মার্চ মাস। আমাদের প্রস্তুতি আছে, প্রস্তুতি চলছে দেখা যাক।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর