জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের পতন না হলে জাতীয় পার্টি বিলীন হয়ে যেতো। আমরা কখনোই আওয়ামী লীগের দোসর ছিলাম না, আমরা সব সময় জনগণের দোসর ছিলাম।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) জাপার বানানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপির আদর্শগত মিল আছে কিন্তু চরিত্রগত কোন মিল নেই। জাতীয় পার্টিকে সব সময় ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টি নির্যাতন ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।
অনেকেই বলেন, আমরা নাকি আওয়ামী লীগকে দানব বানিয়েছি। আমাদের সমর্থন না পেলে আওয়ামী লীগ দানব হতো না? আমরা বিএনপিকে সমর্থন দিলে বিএনপি দানব হতো না? আওয়ামী লীগ সুযোগ পেয়েছে দানব হয়েছে। আমরা কোনো দলকে দানব বানাতে সমর্থন করিনি। কোনো দল যদি দানব হয়ে থাকে তাহলে তারা নিজেদের দোষেই দানব হয়েছে। আবার কোনো দল সুযোগ পেলে যে দানব হবে না তা কি বলা যায়?
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ জোর করে নির্বাচনে নিয়েছে। এতে জাতীয় পার্টি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমি কখনো মন্ত্রীত্বের জন্য রাজনীতি করি না। ২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিলো। ৩০০ আসনের মধ্যে আমিসহ ২৭০ জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হয়েছিলো। ২০১৪ সালে যখন আমরা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তখন আরেকটা গ্রুপ বানিয়ে তাদের লাঙ্গল মার্কা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো সরকার। আমি বিশ্বাস করিনি তাই ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। ২০২৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বাধ্য করা হয় নির্বাচনে যেতে, এটা সবাই জানে। ১৭ ডিসেম্বর ছিলো প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন, আমরা সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার লোকজন আমাদের অফিস ঘেরাও করে রাখে। আমাদের সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করতে দেয়নি।
এখন যারা বড় বড় কথা বলছেন, তারা আওয়ামী লীগের আমলে কতজন কথা বলতে পেরেছেন? আওয়ামী লীগের উল্টা কথা বলার পরে যদি আওয়ামী লীগ পরের দিন আপনাকে আবার সেই কথার উল্টা কথা বলতে বলতো, না বলে পারতেন? আওয়ামী লীগ উঠিয়ে নিলে আপনিও জয় বাংলা বলতেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া। আপনি যদি গণতন্ত্রমনা হন, তাহলে এরশাদকে কখনোই স্বৈরাচার বলতে পারবেন না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ছিলেন জননন্দিত নেতা। কোন নির্বাচনে তিনি পরাজিত হননি। প্রতিটি নির্বাচনে জনগণ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে নির্বাচিত করে জানিয়ে দিয়েছেন, এরশাদ কখনোই স্বৈরাচার ছিল না। ৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাঠে থাকতে পারেনি, তারপরও এরশাদ জেলে থেকেই ৫টি আসনে জয়ী হয়েছেন। জাতীয় পার্টি ওই নির্বাচনে ৩৬টি আসনে জয়ী হয়েছিলো।
জাপা চেয়ারম্যান প্রশ্ন রাখেন, নির্বাচনের কারণে আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে? আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের জন্য। বৈষম্য সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ শোষণ, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনা করে মানুষকে বিরক্ত করেছিলো। শেখ হাসিনার গোয়ার্তুমির জন্য আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। মানুষ বিরক্ত হতে হতে এমন অবস্থায় গেলো যে জীবন দিতে হলেও ফিরবো না। আমি সংসদে বারবার বলেছি, দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে পারে। মুঘল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলেও বৈষম্যের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ জীবন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে আমরা আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে ছিলাম না। আমরা আলাদাভাবে নির্বাচন করেছিলাম। ওই নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করেছিলো। তখন তারা র্যাব গঠন করে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড করেছিলো, দলীয়করণ করেছিলো আবার দলীয় লোক দিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার তৈরি করেছিলো। এর ফলে এক-এগারো এসেছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের ছাড়াই আওয়ামী লীগ ব্যাপক সংখ্যগরিষ্ঠতা পেয়েছিলো। জনগণের প্রত্যাশা দেখে আমরা তখন আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি দশগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। দুটি দলই দেশের মানুষকে বিরক্ত করেছিলো। ক্ষমতায় না এসেও কিছু সংখ্যক নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগের চরিত্র ধারণ করেছে।
প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব মীর আব্দুস সবুর আসুদ, অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসরুর মওলা প্রমুখ।