কতিপয় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পথেই হাঁটছে, যা পরিবর্তনের জন্য মোটেই সুখকর নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টি বনানী কার্যালয়ে জাতীয় কৃষক পার্টির সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, জাতি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। একটা বিশাল পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে। আমাদের জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তনের নমুনা দেখা যাচ্ছে। সেখানে আমরা রাজনীতি কি করছি, অতীতে কি করেছি এবং ভবিষ্যতে কি করব তার একটা ধারণা থাকা দরকার।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতিপক্ষ ৯০ এর পর থেকে আমাদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্নভাবে আমাদের ওপর নির্যাতন ও বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম, কখনো কারো দোসর ছিলাম না। আমরা সবসময় জনগণের জন্য কাজ করেছি। যার জন্য দীর্ঘ ৩৭ বছর পরেও জাতীয় পার্টি জনগণের মাঝে টিকে আছে।
জিএম কাদের বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা নিয়েছিলেন জনগণের আগ্রহে। জনগণ তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ৯০ সালে জনগণের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী নিরপেক্ষ তৈরি করার জন্য এরশাদ পদত্যাগ করেছিলেন।এরশাদকে জেলে বন্দি রেখে তাকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নির্বাচন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে সেই চেষ্টা সফল হয়নি। পরবর্তীতে এরশাদ নির্বাচন করেছিলেন এবং পাঁচ-পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। জাতীয় পার্টি সারাদেশে প্রতিকূল অবস্থার মাঝেও ৩৬টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
তিনি বলেন, পার্লামেন্টে আসার পরে আমাদের সংসদ সদস্যদের বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। এরশাদকে স্বৈরাচার বলা হয়েছে। এটা চরম অগণতান্ত্রিক মনোভাব। এরশাদকে যারা স্বৈরাচার বলেন তারা অগণতান্ত্রিক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ। জনগণের শাসন মানে জনগণের ইচ্ছায় শাসন।
তিনি আরও বলেন, ৯৬ এর নির্বাচনে নির্বাচনে কেয়ারটেকার প্রথা বাতিল করার চেষ্টা জনগণ মেনে নেয়নি। আমরা তখন জনগণের পক্ষে আন্দোলনে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ছিল, জামায়াতও ছিল। পরবর্তীতে যখন নির্বাচন হলো আমরা সবাই আলাদাভাবে নির্বাচন করেছি। সরকার গঠনের সময় যেহেতু জনগণ বিএনপি’র পক্ষে ছিল না- তাই আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলাম। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বিভিন্নভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় আমাদেরকে মাঠে নামতে দেয় নাই, আমাদের পার্টি অফিস ভেঙে দিয়েছে, আক্রমণ করে আমাদের সভা পন্ড করে দিয়েছে, আমাদের সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারী করেছে। তারপরেও আমরা ৯৬ তে ভালো করেছি।
জিএম কাদের বলেন, ২০১৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি সবাই অংশগ্রহণ করেছে। আদর্শগত কারণে অস্তিÍত্ব সংকটের আশঙ্কায় বিএনপি’র বদলে আমরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলাম। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্যতা থাকার পরেও আমরা তাদের অন্যায়-জুলুমের প্রতিবাদ করেছি। ২০২৪ সালে বিভিন্ন টালবাহানা করে আমাদের নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেও নির্বাচনে তা রক্ষা করা হয়নি। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন হতো না বা নির্বাচন বৈধতা পেতনা এই রকম পরিস্থিতি ছিল না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের সঙ্গে মামলার আসামি করা হচ্ছে। এটা মোটেই কাম্য নয়। আমরা জনগণের সঙ্গেই ছিলাম। জনগণ পরিবর্তন আশা করে বুকের রক্ত দিয়ে আওয়ামী সরকারকে উৎখাত করেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় পার্টি মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব এ্যাড. মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, মনিরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মোঃ খলিলুর রহমান খলিল, মোঃ মোস্তফা মহসিন, ভাইস চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর হোসেন, সুলতান আহমেদ সেলিম, মোঃ শফিউল্ল্যাহ শফি, শরিফুল ইসলাম সরু চৌধুরী, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এমএ রাজ্জাক, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, এমএ সুবহান, মাহমুদ আলম, সমরেশ মন্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় সদস্য সামছুল হুদা মিয়া, মোঃ জামাল উদ্দিন, হুমায়ুন কবীর শাওন, কৃষক পার্টির আব্দুস কুদ্দুস মানিক, মোস্তফা কামাল, এনামুল হক বেলাল, আওয়াল হোসেন, রমজান আলী ভূঁইয়া, আব্দুল হামিদ সরকার, এ্যাড. এমদাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।